
সিলেট–৫ (কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ) আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। স্থানীয়ভাবে প্রচার আছে, বিএনপির সঙ্গে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের জোট হলে দলটির কেন্দ্রীয় সভাপতি উবায়দুল্লাহ ফারুককে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। এমন অবস্থায় ‘অসন্তুষ্ট ও ক্ষুব্ধ’ বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। তাঁরা প্রকাশ্যে বিভিন্ন সভা–সমাবেশে আসনটিতে বিএনপির নিজস্ব প্রার্থী ঘোষণার দাবি জানাচ্ছেন।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, এ আসনে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর ‘ভোটব্যাংক’ আছে। এটা বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন ইসলামপন্থী দল বিগত একাধিক নির্বাচনে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীর বদলে ‘জোট রাজনীতির’ অংশ হিসেবে আসনটিতে নিজেদের প্রার্থী মনোনয়ন দেয়।
তবে বিএনপির নেতা–কর্মীর দাবি, আসনটিতে ইসলামপন্থী দলগুলো বিভাজিত থাকায় পৃথকভাবে সেই অর্থে কারও ভোটব্যাংক নেই। এখানে বিএনপির ভোটারই বেশি। তুলনামূলক কম ভোট থাকা সত্ত্বেও জোটের সুবিধা নিয়ে ইসলামপন্থী দলগুলো দর–কষাকষি করে নিজেদের প্রার্থী দিয়ে ধানের শীষের ভোট নিয়ে জয়ী হচ্ছে। এবার তাঁরা এটা হতে দিতে চান না।
স্বাধীনতার পর আসনটিতে চারবার আওয়ামী লীগ, তিনবার জাতীয় পার্টি ও দুবার স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হন। এ ছাড়া বিএনপি, ইসলামী ঐক্যজোট ও জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী একবার করে জয়ী হয়েছেন। সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন। তাঁর বাবা প্রয়াত আল্লামা আবদুল লতিফ চৌধুরী সারা দেশে ‘ফুলতলী হুজুর’ হিসেবে পরিচিত।
স্থানীয় লোকজন জানান, আবদুল লতিফ চৌধুরীর তৈরি করা সংগঠন আনজুমানে আল ইসলাহের অসংখ্য ভক্ত ও মুরিদ আছেন। ফুলতলী অনুসারীদের সিলেট–৫ আসনে একটা ভোটব্যাংক আছে। এ অবস্থায় প্রতিটি নির্বাচনের আগেই এসব ভোট কোন প্রার্থীর পক্ষে যাবে, এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নানা আলোচনা থাকে। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফুলতলী হুজুরের ছেলে নিজেই প্রার্থী হন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবার প্রার্থী হবেন, নাকি কোনো দলের সমর্থনে তাঁদের ভোট যাবে, এ নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে।
বিএনপি নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সর্বশেষ ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে আসনটিতে ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন। ওই একবারই এখানে বিএনপির প্রার্থী জয়ী হন। এরপর ২০০১ সাল থেকে জোট রাজনীতির অংশ হিসেবে বিএনপি আসনটিতে প্রতিবার ইসলামপন্থী দলের নেতাদের প্রার্থী করেছে।
২০০১ ও ২০০৮ সালে বিএনপির জোটসঙ্গী হিসেবে আসনটিতে জামায়াত নেতা ফরীদ উদ্দিন চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি ২০০১ সালে বিজয়ী হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির জোটসঙ্গী হিসেবে মনোনয়ন পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতা উবায়দুল্লাহ ফারুক। সেবার মামুনুর রশিদ (চাকসু মামুন) বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেলেও জোট রাজনীতির ভাগ–বাঁটোয়ারার অংশ হিসেবে শেষ পর্যন্ত উবায়দুল্লাহ ফারুক চূড়ান্ত মনোনয়ন পান।
যোগাযোগ করলে উবায়দুল্লাহ ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলের প্রার্থী হিসেবে আমি অনেক দিন ধরেই মাঠে কাজ করছি। আর বিএনপির সঙ্গে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের জোট হবে কি না, সেটা কয়েক দিনের মধ্যেই খোলাসা হবে। তখন আমাদের দলের কে কোথায় জোটের প্রার্থী হবেন, সেটাও নিশ্চিত করা হবে।’
সিলেট–৫ আসনে এবার বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আছেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি মামুনুর রশিদ (চাকসু মামুন), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান (পাপলু), জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আশিক উদ্দিন চৌধুরী, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাহবুবুল হক চৌধুরী, সংযুক্ত আরব আমিরাত বিএনপির আহ্বায়ক মো. জাকির হোসাইন, যুক্তরাজ্যপ্রবাসী ফাহিম আলম ইসহাক চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সহসভাপতি শরীফ আহমদ লস্কর প্রমুখ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরীর নামও প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছে।
মামুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোটের মাঠে অজনপ্রিয় হওয়া সত্ত্বেও কেবল জোটভুক্ত হয়ে আসন ভাগিয়ে নেওয়ার বিষয়টি স্থানীয় নেতা–কর্মীরা আর মানবেন না। সবাই এখানে এবার বিএনপির দলীয় প্রার্থী দেখতে চান। কারণ, এখানে ধানের শীষের ভোটই বেশি। তাই দলীয় প্রার্থী দেওয়ার দাবি উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে মাঠপর্যায়ে কাজ করার কারণে অনেকেই মনে করছেন, দল আমাকে এখানে প্রার্থী করবে। আমি মনোনয়ন পেলে এখানে ধানের শীষ প্রতীকের বিজয় নিশ্চিত হবে।’
বিএনপি নেতা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমি এখানে মনোনয়নপ্রত্যাশী। তবে দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। গত ১৭ বছর দলকে আঁকড়ে ধরে রাজনীতি করছি। দলকে সুসংগঠিত করতে কাজ করছি। তাই সব দিক বিবেচনা করে দল যেটা ভালো মনে করবে, সেই সিদ্ধান্ত নেবে এবং সেটাই আমরা মেনে নেব।’
এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে মাঠে প্রচার–প্রচারণা চালাচ্ছেন জেলার নায়েবে আমির আনোয়ার হোসেন খান। এখানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রেজাউল করিম আবরার, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের রেজাউল করিম জালালী, খেলাফত মজলিসের সিলেট জেলার উপদেষ্টা আবুল হাসান ও ইসলামী ঐক্যজোটের ফয়জুল হক জালালাবাদী প্রার্থী হিসেবে কাজ করছেন। তবে জাতীয় পার্টির কারও কোনো তৎপরতা এখনো চোখে পড়েনি।