প্রতিষ্ঠার পর ১৪ বছর ধরে বই উৎসবের আয়োজন করছে ‘ইনোভেটর’ নামের সংগঠনটি। এ সময়ে ১৬ হাজার ৭৩৪ শিক্ষার্থীকে বই পড়িয়েছে তারা।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের অনেকে যখন রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন, তখন পাঠ্যপুস্তক থেকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস অনেকটাই সরিয়ে দেওয়া হয়।
সে সময়ে নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস পৌঁছে দিতে বইপড়া উৎসবের আয়োজন করে ‘ইনোভেটর’ নামের একটি সংগঠন। প্রতিষ্ঠার পর দুই বছর ছাড়া ১৪ বছর ধরে তারা আয়োজন করছে এ উৎসব। এর বাইরে বিগত সময়ে ১৬ হাজার ৭৩৪ শিক্ষার্থীকে বই পড়িয়েছে সংগঠনটি।
ইনোভেটরের বইপড়া কর্মসূচিতে একাধিকবার যোগ দিয়েছেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ও কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমন কর্মসূচি দেশের সব জেলায় হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঠাভ্যাস তৈরি হবে।’
ইনোভেটরের প্রতিষ্ঠাতা রেজওয়ান আহমদ ও প্রণব কান্তি দেব নামের দুই তরুণ। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। তখন সংগঠনে যুক্ত হওয়া সবাই বর্তমানে নানা পেশায় কর্মরত।
সংগঠনের নির্বাহী সঞ্চালক প্রণব কান্তি এখন সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। মুখ্য সঞ্চালক রেজওয়ান এখন সিলেট সিটির কাউন্সিলর।
সংগঠনের সদস্যরা জানান, প্রতিষ্ঠার পর সদস্যরা প্রথমে যান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে। যোদ্ধাদের কাছে শোনেন মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা। পরে করলেন মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র উৎসব, শিক্ষার্থীদের নিয়ে বধ্যভূমি পরিদর্শনসহ নানা আয়োজন। এরপর তাঁরা বই তুলে দিলেন শিক্ষার্থীদের হাতে। আয়োজন করলেন বইপড়া উৎসবের। উৎসবের প্রথম বছর মাত্র ৬০ শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেন। প্রতিবছর বাড়তে থাকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এখন বছরে গড়ে হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী অংশ নেন। এ কর্মসূচি এখন রীতিমতো উৎসবে রূপ নিয়েছে। ২০১৭ সালে ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছে সংগঠনটি।
রেজওয়ান আহমদ বলেন, বইপড়া উৎসবের পুরো আয়োজনটি ছয় মাসের। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উৎসবের মাধ্যমে নিবন্ধিত শিক্ষার্থীদের হাতে মাধ্যমিক ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের দুটি শ্রেণিতে নির্বাচিত দুটি পৃথক বই তুলে দেওয়া হয়। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে আয়োজন করা হয় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার।
প্রণব কান্তি দেব জানান, মার্চে বড় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিজয়ী শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করা হয়। এ সময় শ্রেষ্ঠ পাঠক ও সেরা পাঠক নির্বাচিত করা হয়।
আয়োজকেরা জানান, টানা এক দশক সংগঠনের সদস্যরা নিজেদের গাঁটের পয়সা খরচ করে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেন মুক্তিযুদ্ধের বই।
মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে চলতি বছরের বইপড়া উৎসবের নির্বাচিত দুটি বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এসব শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। বিকেলে হাজারো শিক্ষার্থী-অভিভাবকের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের হাতে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস দুটি তুলে দেওয়া হয়।
এবারের উৎসবে অংশ নেওয়া জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র ওয়াফি মাওলা চৌধুরী জানায়, একাডেমিক বইয়ের বাইরেও অন্যান্য বই সে নিয়মিত পড়ে।
বইপড়া উৎসবের খবর পেয়ে সে অন্যান্য সহপাঠীকেও অংশ নিতে উৎসাহিত করেছে। একই প্রতিষ্ঠানের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী জারা আনজুম নাবিলা জানায়, উৎসবটা বই পড়ার হওয়ায় আগ্রহ নিয়েই সে অংশ নিয়েছে।