১৩০ বছরের পুরোনো ‘জিয়াবাড়ীতে’ পাঁচবার এসেছিলেন খালেদা জিয়া। আজ মঙ্গলবার বিকেলে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ী গ্রামে
১৩০ বছরের পুরোনো ‘জিয়াবাড়ীতে’ পাঁচবার এসেছিলেন খালেদা জিয়া। আজ মঙ্গলবার বিকেলে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ী গ্রামে

বাগবাড়ী গ্রামের শতবর্ষী শ্বশুরবাড়িতে পাঁচবার এসেছিলেন খালেদা জিয়া

ইটের একতলা জরাজীর্ণ পুরোনো দালান বাড়ি। দুই কক্ষের বাড়ির ছাদে একটি চিলেকোঠার ঘর। বাড়ির সামনে দেয়ালে খোদাই করে লেখা নির্মাণকাল ‘২২শে আষাঢ় ১৩০২ সন, ১৮৯৫ সাল’।  ফটকে লেখা ‘জিয়াবাড়ী’। তবে বাড়িতে কেউ বসবাস করেন না। জনসাধারণের প্রবেশাধিকার নেই।

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ী গ্রামের এই বাড়িই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের পৈতৃক বাড়ি ও সদ্য প্রয়াত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শ্বশুরবাড়ি। এই বাড়িতে পাঁচবার এসেছেন খালেদা জিয়া। আজ মঙ্গলবার সকালে খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে দিনভর শোকার্ত নেতা-কর্মী ছাড়াও অনেক মানুষ ভিড় করেন।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিনে বগুড়া শহর থেকে বনানী-মাদলা-বাগবাড়ী সড়ক হয়ে ১৭ কিলোমিটার অদূরে জিয়াবাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িটির সামনে ফাঁকা জায়গা। বাড়ির পেছনে শানবাঁধানো পুকুরঘাট। বাড়ির ভেতরে শয়নকক্ষে খাট, ড্রেসিং টেবিল, সোফাসহ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ব্যবহৃত কিছু আসবাব রয়েছে। তবে জিয়াউর রহমান যে খাটে ঘুমাতেন, সেই খাটের সঙ্গে থাকা বোতাম লাগানো মশারি, পুরোনো আমলের কিছু কাচের গ্লাসসহ কিছু তৈজসপত্র নিরাপত্তা ঝুঁকি ও ঐতিহাসিক বিবেচনায় চট্টগ্রাম জাদুঘরে হস্তান্তর করা হয়েছে।

বিএনপির চেয়ারপাসনের উপদেষ্টা ও বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হেলালুজ্জামান তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, জিয়াউর রহমানের জন্ম বাগবাড়ীতে এবং এখানেই তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে ও পরে খালেদা জিয়া জিয়াবাড়ীতে দুইবার এসেছেন। এ ছাড়া ১৯৯৬ সালে বিরোধীদলীয় নেতা থাকাকালে একবার এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে ও পরে আরও দুইবারসহ মোট পাঁচবার এই বাড়িতে এসেছেন।

জিয়াবাড়ীর তত্ত্বাবধায়ক রফিকুল ইসলাম বলেন, ১৯৭৬ সাল থেকে তিনি এ বাড়ির দেখভাল করছেন। আগে তাঁর বাবা এ বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকাকালে কৃষকদের সেচ সুবিধার জন্য বাড়ির সামনে পূর্ব পাশে একটি খাল খনন করেন। এ খালটি থেকে এখনো সেচ সুবিধা পাচ্ছেন এলাকার কৃষকেরা। ১৮৯৫ সালে একতলা পাকা বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। ১৩০ বছরের পুরোনো এই বাড়ির দ্বিতীয় তলায় ২০০২ সালে একটি কক্ষ নির্মাণ করা হয়। জিয়াউর রহমানের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য ও বাড়িটির স্বকীয়তা ধরে রাখতে এত দিন সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে দেয়ালে রং করা ছাড়াও ছাদ ও কাঠের কিছু অংশ মেরামত করা হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের দাদা কামাল উদ্দিন মণ্ডল পার্শ্ববর্তী মহিষাবাথান গ্রাম থেকে বাগবাড়ীতে এসে তৎকালীন জমিদার পরিবারের কন্যা মিছিরুন নেছাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর কামাল উদ্দিন মণ্ডল স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি বাগবাড়ীতেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এই দম্পতির সাত ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে পঞ্চম ছেলে মনসুর রহমান। মনসুর রহমান কলকাতার জাহানারা খাতুনকে বিয়ে করেন। তাঁদের চার ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় ছেলে জিয়াউর রহমান। তাঁর নাম রেখেছিলেন দাদা কামাল উদ্দিন মণ্ডল।

গাবতলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোরশেদ মিল্টন বলেন, জিয়াবাড়ী শুধু বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পৈতৃক বাড়ি নয়, এটি ইতিহাসের একটি অনন্য স্থাপনা ও ইতিহাসের সাক্ষী। জিয়াবাড়ীকে স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তর করে রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষণ করা দরকার।