
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে প্রায় ৩৯ শতাংশ ছাত্রী ভোট দেননি। দীর্ঘ ৩৩ বছর পর আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ছাত্রীদের ১০টি হলে ৬১ শতাংশ ভোট পড়েছে।
বিভিন্ন আবাসিক হলে স্থাপিত কেন্দ্রের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র দেখা গেছে। আজ সকাল নয়টা থেকে জাকসু ও ২১টি হলে হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়; চলে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। তবে নানা কারণে কয়েকটি কেন্দ্রে নির্ধারিত সময়ের পরও ভোট গ্রহণ করা হয়।
জাকসু নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ১১ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ৫ হাজার ৭৪২ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ২১টি আবাসিক হলের মধ্যে ছাত্রীদের ১০টি। জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে এসব হলে মোট ভোট পড়েছে ৩ হাজার ৫১১টি। সে হিসাবে ছাত্রীদের মোট ভোটারের ৬১ দশমিক ১৪ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি ছিলেন।
যেকোনো আন্দোলন–সংগ্রামে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়। তবে এবারের নির্বাচনে ছাত্রীদের প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রেও আগ্রহ কম ছিল। জাকসুতে ২৫টি পদের বিপরীতে মোট প্রার্থী ছিলেন ১৭৭ জন। এর মধ্যে মাত্র ৪৬ জন ছিলেন ছাত্রী। এই ২৫টি পদের মধ্যে ছাত্রীদের জন্য নির্ধারিত ছয়টি পদ রয়েছে। এই ৬টি পদেই প্রার্থী ছিলেন ৩৫ জন।
নির্বাচন কমিশন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রীদের ১০টি হলে মোট ১৫০টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে ৫৯টিতে কোনো প্রার্থী ছিলেন না। একজন করে প্রার্থী ছিলেন ৬৭টি পদে। সে হিসাবে মাত্র ২৪টি পদে ভোট নেওয়া হয়।
ছাত্র সংসদ নির্বাচনে দলীয় রাজনীতির প্রভাবের কারণে অনেকে আগ্রহ হারান বলে মনে করছেন ছাত্রীদের কেউ কেউ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজিলাতুন্নেছা হলের আবাসিক ছাত্রী মারজুকা মাহী বলেন, ‘অনেক ছাত্রী হয়তো ভেবেছেন জাকসু নির্বাচন হলেও তাঁদের ভাগ্য খুলবে না। জাকসুর প্রতিনিধিরাও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ না করে নিজেদের দলীয় স্বার্থেই কাজ করবেন, এমনটি ভেবে অনেকেই ভোট দিতে আসেননি।’
অবশ্য ভোট গ্রহণ শুরুর পর কিছু অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগ আসার কারণেও ছাত্রীদের কেউ কেউ ভোট দিতে আগ্রহী হননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম খালেদা জিয়া হলের আবাসিক ছাত্রী জান্নাতুল মাওয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক শিক্ষার্থী নির্বাচনের আগে বাড়ি চলে গেছে। আবার অনেকে হলেই ছিল কিন্তু ভোট দিতে যায়নি। কারণ, অনেকে শুনেছে বিভিন্ন হলে ঝামেলা হচ্ছে, তাই তারা ভোটদানে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।’
ভোটের উপস্থিতিতে ছাত্রীদের যে হার, সেটা আরও কম হতো যদি ভোটকেন্দ্রগুলো যার যার হলে না হয়ে অন্য কোথাও হতো, মনে করেন এই ছাত্রী।
ছাত্রীদের ১০টি হলের মধ্যে নওয়াব ফয়জুন্নেসা ও বেগম সুফিয়া কামাল হলে হল সংসদের জন্য নির্বাচন হয়নি। তবে এ দুটি হলে শুধু জাকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হয়। নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে ১৫টি পদের বিপরীতে মাত্র ছয় পদে ছয়জন মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। বাকি পদগুলো শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া সুফিয়া কামাল হলেও ১৫টি পদের মধ্যে মাত্র ১০টি পদে একজন করে ১০ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় হল দুটিতে হল সংসদের ভোট গ্রহণ করা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে ২৮০টি ভোটের মধ্যে ১৩৭টি, জাহানারা ইমাম হলে ৩৬৭টির মধ্যে ২৪২টি, প্রীতিলতা হলে ৩৯৯টির মধ্যে ২৪৬টি, বেগম খালেদা জিয়া হলে ৪০৯টির মধ্যে ২৪৯টি, বেগম সুফিয়া কামাল হলে ৪৫৬টির মধ্যে ২৪৬টি, ১৩ নম্বর ছাত্রী হলে ৫১৯টির মধ্যে ২৮৯টি, ১৫ নম্বর ছাত্রী হলে ৫৭১টির মধ্যে ৩৩৮টি, রোকেয়া হলে ৯৫৫টির মধ্যে ৬৮০টি, ফজিলাতুন্নেছা হলে ৮০৩টির মধ্যে ৪৮৯টি এবং বীর প্রতীক তারামন বিবি হলে ৯৮৩টির মধ্যে ৫৯৫টি ভোট পড়েছে।