
পরিবারে সচ্ছলতা ফেরাতে লিবিয়া গিয়েছিলেন সাহাদ আলী (৩০)। এক বছর পর তিনি দেশে ফিরেছেন, কিন্তু লাশ হয়ে। পবিত্র ঈদুল আজহার আগের রাতে গতকাল বুধবার সাড়ে ১২টায় তাঁর বাড়িতে লাশ এসে পৌঁছায়। খবর পেয়ে গ্রামের শতাধিক লোক জড়ো হন তাঁকে শেষবারের মতো দেখতে।
সাহাদের বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার বনগাঁও গ্রামে। রাতেই জানাজা শেষে গ্রামের পঞ্চায়েত কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। লাশ বাড়িতে আসার পর থেকেই সাহেদ আলীর মা হাজেরা বিবি বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমার বুক যারা খালি করছে, তাদের বিচার চাই।’
থানা-পুলিশ, পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাহাদ বনগাঁও গ্রামের কৃষক মৃত তবারক আলী ও হাজেরা বিবির ছেলে। উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের পাড়ারগাঁও গ্রামের দালাল শাহীনের মাধ্যমে ২০২২ সালের ২১ মে চার লাখ টাকা দিয়ে লিবিয়া যান তিনি। ইচ্ছা ছিল সেখান থেকে ইতালিতে যাবেন।
লিবিয়া গিয়ে সাহাদের পরিচয় হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দালাল সাদ্দাম ও সাইফুলের সঙ্গে। গত বছরের নভেম্বর মাসে সাদ্দাম ও সাইফুল তাঁকে মাফিয়া চক্রের হাতে তুলে দেন। এরপর চক্রটি তাঁর পরিবারের কাছে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চায়। মুক্তিপণের টাকা পুরোটা না পাওয়ায় নির্যাতনের মাত্রা বাড়ে। এরপর গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পরিবারের কাছে সাহাদ আলীর মৃত্যুর খবর আসে।
সাহাদ আলীর বোন সেবিকা বেগম বলেন, ‘মুক্তিপণের টাকার জন্য আমার ভাইকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। দিনের পর দিন অনাহারে রাখা হয়। আমরা দালাল সাদ্দামের মাধ্যমে মাফিয়া চক্রের সঙ্গে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করে প্রাণ ভিক্ষা চেয়েও ভাইয়ের জীবন বাঁচাতে পারিনি।’ তিনি বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদন করে ভাইয়ের লাশ দেশে আনেন তাঁরা। এ ঘটনায় তাঁরা দালালদের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেবেন।
সাহাদ আলীর ভাই সৈয়দ আলী বলেন, তাঁদের বাড়িতে ঈদের কোনো আনন্দ নেই। তবে ভাইয়ের লাশ যে দেশে এনে বাড়িতে দাফন করতে পেরেছেন, শত কষ্টের মধ্যে এটা কিছুটা স্বস্তির বিষয়।
বনগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ইমাদ উদ্দিন বলেন, পরিবারের ভাগ্য ফেরাতে শেষ সম্বল জায়গাজমি বিক্রি করে লিবিয়া হয়ে ইতালি যেতে চেয়েছিলেন সাহাদ আলী। তাঁর মৃত্যুতে পরিবারটি নিঃশেষ হয়ে গেছে। তাঁরা দেড় লাখ টাকা চাঁদা তুলে মাফিয়া চক্রের কাছে পাঠিয়ে তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পারেননি।
জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দেওয়া হলে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।