গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। তা না হলে একক কর্তৃত্ব কায়েমের চেষ্টাকারীদের ষড়যন্ত্রে রাষ্ট্র আবারও অন্ধকার অমাবস্যায় ডুবে যাবে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের নবম জেলা সম্মেলনে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এ কথাগুলো বলেন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমাদের প্রয়োজন বিচার, সংস্কার এবং স্থিতিশীলতা। নির্বাচন না দিয়ে কেউ একক কর্তৃত্ব কায়েম করতে চাইলে রাষ্ট্র অন্ধকারে ঢেকে যাবে। আমরা জুলাই হত্যার বিচার চাই, সংস্কার চাই, নির্বাচন চাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পরাজিত হয়ে এখনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত; তবে জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্র সফল হবে না।’
জোনায়েদ সাকি বলেন, জুলাইয়ের হত্যাযজ্ঞ, গত ১৫ বছরের গুম-খুন, লুটপাট ও দুর্নীতির বিচার করতে হবে। ন্যায়বিচার ও ইনসাফ ছাড়া রাষ্ট্র টিকে থাকবে না।
অভ্যুত্থানের পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে সাকি বলেন, ‘অভ্যুত্থানের সুযোগ নিয়ে একদল উগ্রপন্থী দেশটাকে আওয়ামী লীগের মতো জবরদখলে নিতে চাইছে। ছাত্রসমাজ ও তরুণদের এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি—তারা কেউ দুর্নীতির বাইরে নয়, তাই দেশের ছাত্রসমাজকে এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, ‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, সংবিধান সংস্কার এবং নির্বাচন জরুরি। জনগণের সম্মতিতে ভোট ছাড়া সংবিধানের সংস্কার কিংবা মৌলিক সংশোধন করা যাবে না। আর জনগণের ভোটে করা সংস্কার কখনোই আদালত বাতিল করতে পারবে না—এই আইন ইন্টেরিমকে করতে হবে। কারণ, জনগণ হলো আসল নিয়ামক শক্তি।’
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট টেনে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির দ্বন্দ্বে বাংলাদেশ ঘিরে ত্রিমুখী টানাটানি চলছে। এই বাস্তবতায় রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐকমত্যের অমিলে শক্তি পরীক্ষার সংঘাতে যাওয়া যাবে না। ভিন্নমতকে জনগণের কাছে নিয়ে যেতে হবে, জনগণ ভোট দিয়ে ঠিক করবেন দেশের সংবিধান।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রকে এমনভাবে গঠন করতে হবে, যাতে প্রত্যেক নাগরিক মনে করতে পারে এই দেশটা আমার। নতুন গণতান্ত্রিক বন্দোবস্ত ছাড়া সেটা সম্ভব নয়। এ জন্য বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন এই তিনটি অপরিহার্য।’
সাকি বলেন, ‘আমরা এমপি-মন্ত্রিত্বের জন্য সংগ্রামে নামিনি; সংগ্রামে নেমেছি রাজনৈতিক ব্যবস্থা পাল্টানোর জন্য। দেশের মালিক জনগণ, তাই তাদের ভোট ছাড়া কোনো সাংবিধানিক পরিবর্তন বৈধ হতে পারে না।’
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের জেলা সভাপতি ফারহানা মানিকের সভাপতিত্বে সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন শ্রমিক নেতা তাসলিমা আখতার, জেলা সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, নারীনেত্রী পপি রানী সরকার।