চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেন জুলাই আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ খলিল

জুলাই আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ১০ মাস পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া খলিল খানের জানাজা। বৃহস্পতিবার সকালে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার ঘটকেরচর গ্রামে
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর কাজীপাড়া এলাকায় গত বছরের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গুলিতে আহত বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার খলিল খান (৩৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। গতকাল বুধবার বেলা ৩টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে তিনি মারা যান বলে পরিবার জানায়।

নিহত খলিল খানের বাড়ি বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের ঘটকেরচর গ্রামে। পরিবারের অভিযোগ, উন্নত চিকিৎসার অভাবেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার খলিলের মরদেহ ঘটকেরচরে আনা হয়। এরপর জানাজা শেষে সকালে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

খলিলের স্ত্রী নার্গিস বেগম জানান, এক ছেলেকে নিয়ে স্বামীর সঙ্গে তিনি ঢাকায় থাকতেন। তাঁর স্বামী ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন, আর তিনি তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। গত বছরের ২০ জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় কাজীপাড়ায় পুলিশের গুলিতে তাঁর স্বামী গুরুতর আহত হন। তাঁর পায়ে দুটি গুলি লাগে। ভয়ভীতির কারণে ওই সময় গোপনে চিকিৎসা করানো হয় তাঁকে।

নার্গিস বেগম জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৫ আগস্ট তাঁর স্বামীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা একটি গুলি অপসারণ করতে পারলেও আরেকটি রয়ে যায়। ১০ মে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই গতকাল মারা যান তিনি।

খলিল খানের বৃদ্ধা মা পেয়ার বেগম বলেন, ‘ছেলের উন্নত চিকিৎসা করাতে পারিনি। তার স্ত্রী যতটুকু পেরেছে, করেছে। আমি একজন বিধবা, আমার একমাত্র ভরসা ছিল আমার ছেলে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকে সে সব সময় ব্যথায় ভুগত। ভালো চিকিৎসা পেলে হয়তো সে বেঁচে যেত।’

খলিল খানের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, রাষ্ট্র বা আন্দোলনের সংগঠকেরা কেউই তাঁর উন্নত চিকিৎসায় এগিয়ে আসেননি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আহমেদ আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকালে তিনি খলিল খানের জানাজায় উপস্থিত ছিলেন। ইউএনও জানান, জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে বাবুগঞ্জের ২১ জন আহত হন, যাঁদের ‘সি’ ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ মে প্রত্যেককে এক লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। খলিল খান চিকিৎসাধীন থাকায় তাঁর স্ত্রী নার্গিস বেগমের হাতে ওই চেক হস্তান্তর করা হয়। খলিল খানের দাফনের জন্য আজ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।

চিকিৎসায় ঘাটতির অভিযোগ প্রশ্নে ইউএনও বলেন, এটা সঠিক নয়। কারণ, সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ চিকিৎসায় তিনি সুস্থ হন। পরে স্ট্রোক করার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।