
তখন সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই। আকাশের এক কোনায় দিনের অবশিষ্ট আলোটুকুও দ্রুত হারাতে শুরু করেছে। ঠিক এই সময়ে এদিক-সেদিক থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে এল চড়ুই পাখি। এরপর দল বেঁধে জিরিয়ে নিচ্ছে ব্যস্ত মহাসড়কসংলগ্ন বৈদ্যুতিক তারের ওপর। সেখান থেকে সাঁই করে আরও নিচে নেমে কেউ কেউ বসছে বকুল, দেবদারু, পাকুড় কিংবা পিটুলিগাছের ডালে। মুহূর্তেই শত শত চড়ুইয়ের কিচিরমিচিরে মুখর হয়ে উঠল ব্যস্ত মহাসড়কের দুই পাশ।
এমন দৃশ্যের দেখা মিলবে দিনাজপুরের বিরামপুর পৌরশহরের কলাবাগান এলাকার দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কে। শনিবার শেষ বিকেলে কলাবাগান এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কটির পাশে রাসেল ফিজিওথেরাপি সেন্টার থেকে শুরু করে হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত বিভিন্ন গাছে সন্ধ্যার আগে আগে জমায়েত হয়েছে এসব পাখি। পথচারীদের চোখ আটকে যায় শব্দমুখর গাছে। সেখানে ক্ষণিক দাঁড়িয়ে চোখ ও মনকে প্রশান্ত করছেন কেউ কেউ। কেউ মুঠোফোনের ক্যামেরায় দৃশ্য বন্দী করেন অন্যদের দেখাবেন ভেবে।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার ভাষ্য, এসব পাখি কোথা থেকে এসেছে, কেউ জানেন না। প্রতিদিন গোধূলিবেলায় পাখিগুলো দল বেঁধে গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটিতে এসে বসে। আবার পরদিন ভোর হতেই হারিয়ে যায় দূর-দূরান্তে।
একটি দোকানের সামনে বসে চড়ুই পাখিদের সান্ধ্য আড্ডা দেখছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত তিন-চার মাস ধরে আমার বাড়ির সামনের বকুলগাছে চড়ুই পাখিগুলো আসা শুরু করেছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় পাখিগুলো এখানে আসে, কিচিরমিচির শব্দ করে। খুব ভালো লাগে। প্রতিদিন ভোরবেলা কিচিরমিচির শব্দে আবার বাড়ির সবার ঘুম ভাঙে। পাখিগুলোকে কেউ যাতে বিরক্ত না করে সেদিকে আমরা খেয়াল রাখি।’
কলাবাগান এলাকার সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী শামিমা আক্তার বলেন, ‘পাখি আমার খুব পছন্দ। চড়ুই পাখিগুলো আমাদের বাসার বেলকনিতে যখন বসে, তখন আমি চেয়ার নিয়ে পাখিগুলোর সামনে বসে থাকি। ওদের কিচিরমিচির শব্দ আমার ভালো লাগে। বাসায় যখন পড়তে বসি, তখনো টেবিল থেকে কিচিরমিচির শব্দ শুনতে পাই।’
পাঁচ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে সেখানে চড়ুই পাখি দেখতে এসেছেন পূর্ব জগন্নাথপুর মহল্লার বাসিন্দা আবিদ হাসান। তিনি বলেন, গত পরশু সন্ধ্যায় এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে গাছে কিচিরমিচির শব্দ শুনে দাঁড়িয়েছিলেন। মেয়ে পাখি খুব পছন্দ করে। তাই তাকে পাখি দেখানোর জন্য নিয়ে এসেছেন।
চড়ুই পাখি সাধারণত মার্চ মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত রাস্তার পাশের ঝোপঝাড়, বসতবাড়ির কোনাতে বা দেয়ালের গর্ত ও ফোকরে বসবাস করে বলে জানান বিরামপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বিপুল কুমার চক্রবর্তী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, চড়ুই পাখি প্রকৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এরা বিভিন্ন ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে এবং ফুলের পরাগায়ন ঘটিয়ে আমাদের প্রকৃতির উপকার করে। এগুলোকে যেন বিরক্ত না করা হয়—এ বিষয়ে সচেষ্ট থাকতে হবে।