কাজী জামাল উদ্দিন ২৫ বছরের পরিশ্রমে জেলার অন্যতম সফল কৃষি উদ্যোক্তা
কাজী জামাল উদ্দিন ২৫ বছরের পরিশ্রমে জেলার অন্যতম সফল কৃষি উদ্যোক্তা

জামাল বছরে ৩ কোটি টাকার সবজি বেচেন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কাজী জামাল উদ্দিন ২৫ বছর ধরে কৃষিকাজ করছেন। এই সময়ে তিনি জেলায় অন্তত ১০০ জন উদ্যোক্তা তৈরি করেছেন। বছরে তিনি প্রায় ৩ কোটি টাকার সবজি বিক্রি করেন। কৃষি থেকে বছরে তাঁর আয় ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামের বাসিন্দা কাজী জামাল উদ্দিন। ২০০১ সালে মাত্র এক বিঘার মতো জমিতে চাষাবাদ শুরু করেন। বর্তমানে তাঁর চাষের জমির পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ১২০ বিঘা। ২৫ বছরের পরিশ্রমে তিনি এখন জেলার অন্যতম সফল ও মডেল কৃষি উদ্যোক্তা।

জামাল উদ্দিন জানালেন, গ্রামের বাড়ির উঠানে বেগুন ও টমোটো চাষ দিয়ে তাঁর কৃষিকাজ শুরু। পরে নিজের প্রায় এক বিঘা জমিতে চাষাবাদ করেন। ক্রমে চাষাবাদের জমির পরিমাণ বেড়েছে। বর্তমানে কৃষিকাজে তাঁর দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা বিনিয়োগ আছে। ২৫ বছরে তিনি জেলায় অন্তত ১০০ জন উদ্যোক্তা তৈরি করেছেন। তাঁর অধীন কাজ করেন ১০০ জন শ্রমিক। বছরে তিনি প্রায় ৩ কোটি টাকার সবজি বিক্রি করেন। কৃষি থেকে বছরে তাঁর আয় ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকা। 

কাজী জামাল উদ্দিনের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁর গ্রামের প্রায় সবাই এখন কৃষি উদ্যোক্তা। 

মালচিং পদ্ধতিতে চাষে সাফল্য

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কাজী জামাল উদ্দিনই প্রথম মালচিং পদ্ধতিতে ফসলের চাষাবাদ শুরু করেন। বর্তমানে তিনি সদর উপজেলার রাধিকা ও রামরাইলে টমেটো, আখাউড়া উপজেলার রুটি নূরপুরে টমেটো ও তরমুজ, হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার মনতলায় তরমুজ ও টমেটো চাষবাদ করছেন। এ ছাড়া তিনি কাঁচা মরিচ, শাম্মাম, শসা, করলা, চিচিঙ্গা, বেগুন ও ক্যাপসিকাম চাষাবাদ করেন। তাঁর উৎপাদিত সবজি জেলার বিভিন্ন বাজারের পাশাপাশি ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় যায়।

সদর উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, জামাল উদ্দিনই জেলায় প্রথম মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করেছেন। বিশ্ব খাদ্য দিবসে সেরা উৎপাদনকারী হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি জেলার সবচেয়ে বড় সফল কৃষি উদ্যোক্তা। তাঁর কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁর গ্রামের প্রায় সবাই এখন কৃষি উদ্যোক্তা। তাঁর কাজী অ্যাগ্রো ফার্মে হাতে–কলমে প্রশিক্ষণ নিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগ্রহী ব্যক্তিরা যান। 

আমজাদ খান নামের একজনের কাছে প্রাথমিক চাষাবাদ শিখেছেন জানিয়ে কাজী জামাল উদ্দিন বলেন, ‘তিনি আমার ওস্তাদ।’ ২০০৮ সালে মোহাম্মদপুর গ্রামের মো. মহিউদ্দিনের সঙ্গে যৌথভাব কৃষি ব্যবসা শুরু করেন জামাল। ১০ বছর দুজন একসঙ্গে ছিলেন। পরে ২০১৮ সালে তাঁরা আলাদা হয়ে যান।

সরেজমিন জামালের ফার্মে

সদর উপজেলার রাধিকায় কাজী জামাল উদ্দিন কাজী অ্যাগ্রো ফার্মের অবস্থান। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকেরা টমেটোবাগানে কাজ করছেন। শ্রমিকদের জন্য রান্না চলছে। ব্যবস্থাপক ছদারুল ইসলাম বসে হিসাব করছিলেন। আখাউড়ার ধরখারের রুটি নূরপুরে বর্তমানে সবচেয়ে বড় প্রকল্প চলছে। সাধারণত জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ় ও শ্রাবণ মাস সবজির মূল মৌসুম। এ সময় তাঁর শতাধিক শ্রমিক কাজ করেন। সব জায়গার জমি ১০ বছরের জন্য বর্গা নেওয়া।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, জামাল উদ্দিন জেলার সবচেয়ে সফল কৃষি উদ্যোক্তা। সরকারিভাবে রাধিকার কাজী অ্যাগ্রো ফার্মে প্রশিক্ষণের জন্য পরিদর্শন করা হয়। এটি মডেল কৃষি খামার। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কৃষির সঙ্গে লেগে আছেন। কৃষিতে তিনি সাফল্য পেয়েছেন। আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন করতে পেরেছেন। তিনি জেলার অন্য কৃষকদের জন্য অনুপ্রেরণা।

জামাল উদ্দিন আক্ষেপ করে বলেন, কোনো সবজিভোক্তা ২০ টাকায় কিনলে বুঝতে হবে কৃষক শেষ। কৃষক ও খামারিদের বাঁচাতে হলে ভোক্তাদের ৩০ থেকে ৪০ টাকার সবজি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় কিনতে হবে। তাহলে কৃষক কিছু টাকা পাবেন। নাহলে বেশি টাকায় বাইরে থেকে আনা সবজি কিনে খেতে হবে। জানালেন, তিনি ১২০ বিঘা জমিতে সারা বছরই কোনো না কোনো সবজির আবাদ করেন। 

স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে জামাল উদ্দিনের সংসার। জীবনে যা কিছু অর্জন, তার সবই কৃষি থেকে বলে জানালেন তিনি। তিনি বলেন, ‘কৃষির আয় থেকে ৭০–৮০ লাখ টাকা খরচ করে বাড়ি বানিয়েছি। নিজের জন্য জমি কিনেছি। সাফল্যের পেছনে আছে পরিশ্রম, নিষ্ঠা, সততা আর সীমাহীন কষ্ট ও সংগ্রাম। কাজটির সঙ্গে লেগে ছিলাম। সেরা ছিলাম, সেরা আছি। ১০০ উদ্যোক্তা তৈরি করতে পেরেছি। গত আট বছরে তিন কোটি টাকা রোজগার করেছি। । ভবিষ্যতে পুকুরে মাছ চাষ ও গরুর খামারের ব্যবসা শুরুর চিন্তা আছে।’