বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে কুমিল্লায় দলটির প্রস্তুতি সভায় হট্টগোলের ঘটনা ঘটে। সোমবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে কুমিল্লায় দলটির প্রস্তুতি সভায় হট্টগোলের ঘটনা ঘটে। সোমবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে

কুমিল্লায় তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে বিএনপির প্রস্তুতি সভায় হট্টগোল

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে কুমিল্লায় দলটির নেতাদের প্রস্তুতি সভায় হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কুমিল্লা-৬ আসনে দলের মনোনয়ন পাওয়া বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী। বক্তৃতার আগে তাঁর নাম ঘোষণা করা মাত্রই ‘ভুয়া ভুয়া, ইয়াছিন ভাই, ইয়াছিন ভাই’ স্লোগানে হট্টগোল সৃষ্টি হয়। পরে মহানগর ও জেলা বিএনপির নেতারা পরিস্থিতি শান্ত করেন। এ ঘটনার কয়েকটি ভিডিও এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

আজ সোমবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে এ ঘটনা ঘটে। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর বিএনপি তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে উপলক্ষে যৌথভাবে ওই প্রস্তুতি সভার আয়োজন করে। কুমিল্লা আদর্শ সদর ও সদর দক্ষিণ উপজেলা, সিটি করপোরেশন এবং সেনানিবাস এলাকা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-৬ আসনটি ‘সদর আসন’ হিসেবে পরিচিত।

৩ নভেম্বর এ আসনে মনিরুল হক চৌধুরীর নাম ঘোষণার পর থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছেন চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আমিন-উর-রশিদের (ইয়াছিন) অনুসারীরা। মনোনয়ন পরিবর্তন করে আমিন-উর-রশিদকে প্রার্থী ঘোষণার দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন তাঁরা।
মনিরুল হক চৌধুরী ২০১৮ সালে কুমিল্লা-১০ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী এলাকার সীমানার পুনর্নির্ধারণের চূড়ান্ত তালিকায় কুমিল্লা-১০ আসনের কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলাকে কুমিল্লা-৬ আসনে যুক্ত করা হয়। আমিন-উর-রশিদ ২০১৮ সালের নির্বাচনে কুমিল্লা-৬ আসনে দলীয় প্রার্থী ছিলেন। স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের একটা অংশ তাঁকে এবারও আসনটিতে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে সোমবার বেলা ১১টার দিকে শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে প্রস্তুতি সভার আয়োজন করা হলেও সভাটি বেলা একটার দিকে শুরু হয়। সভা শুরুর আগে মঞ্চে লাগানো ব্যানারে প্রধান অতিথি হিসেবে হিসেবে মনিরুল হক চৌধুরীর নাম উল্লেখ করা হয়। প্রধান বক্তা হিসেবে বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া এবং সভাপতি হিসেবে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাকারিয়া তাহেরের (সুমন) নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া ব্যানারে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নাম বিশেষ অতিথি হিসেবে উল্লেখ করা হলেও আমিন-উর-রশিদের নাম রাখা হয়নি।

সভা শুরুর আগেই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলে দ্রুত সেটি পরিবর্তন করা হয়। পরিবর্তন করা ব্যানারে মোস্তাক মিয়াকে বিশেষ অতিথিতে এনে আমিন-উর-রশিদকে প্রধান বক্তা করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমিন-উর-রশিদ ওই সভায় উপস্থিত হননি। এ সভায় বিএনপির প্রশাসনিক জেলা কুমিল্লা দক্ষিণের আওতাধীন প্রতিটি উপজেলা ও পৌরসভা এবং কুমিল্লা মহানগরের প্রতিটি ওয়ার্ডের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া দক্ষিণ জেলা ও মহানগরের বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় উপস্থিত অন্তত পাঁচজন নেতা প্রথম আলোকে জানান, বেলা পৌনে তিনটার দিকে সভার সঞ্চালক কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মাহমুদ প্রধান অতিথির বক্তৃতার জন্য কুমিল্লা-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী মনিরুল হক চৌধুরী নাম ঘোষণা করেন। ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় হট্টগোল। সভায় দর্শকসারিতে থাকা নেতাদের অধিকাংশই ‘ভুয়া ভুয়া, ইয়াছিন ভাই, ইয়াছিন ভাই’ স্লোগান দিতে থাকেন। মঞ্চে বসা নেতারা সবাইকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানালেও স্লোগান চলতেই থাকে। পরে কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা (টিপু) প্রধান অতিথির সামনে থেকে মাইক্রোফোন নিয়ে সবাইকে শান্ত হতে বলেন। যাঁরা বিশৃঙ্খলা করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি দেন। অন্তত আড়াই মিনিট পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে মনিরুল হক চৌধুরী বক্তৃতা করেন।

জানতে চাইলে কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যানারে সবার নাম রয়েছে, কিন্তু ইয়াছিন (আমিন-উর-রশিদ) ভাইয়ের নাম না থাকায় সভার শুরুতেই অনেক নেতা-কর্মী অনুষ্ঠান বয়কট করতে চান। পরে দ্রুত ব্যানারে ইয়াছিন ভাইয়ের নাম যুক্ত করা হয়। প্রধান অতিথির নাম ঘোষণার সময় নেতা-কর্মীদের মধ্যে হট্টগোল দেখা দিলে আমরা দ্রুতই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করি। এ ছাড়া তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।’

প্রস্তুতি সভায় সভাপতির বক্তব্যে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাকারিয়া তাহের (সুমন) নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘যদি দল করেন, তাহলে মনে রাখতে হবে—আমাদের নেতা একমাত্র তারেক রহমান আর নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এর বাইরে আর কোনো নেতা নেই। আমরা সকলেই কর্মী। আমি নিজেকে কর্মী মনে করি। আপনার ব্যক্তিপছন্দ থাকতেই পারে, কিন্তু আনুগত্য রাখতে হবে দলের প্রতি। মনে রাখবেন, কোনো ব্যক্তি দলের চেয়ে বড় না। বিএনপি বড় দল, আমাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকবে; কিন্তু তারেক রহমান কোনো সিদ্ধান্ত দিলে সেটিই আমাদের কাছে চূড়ান্ত। সবাইকে মনে রাখতে হবে, তারেক রহমানই আমাদের জন্য শেষ কথা।’