অনুশনরত এক শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন চিকিৎসক। আজ সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয়ের সামনে
অনুশনরত এক শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন চিকিৎসক। আজ সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয়ের সামনে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

অনশনরত দুই শিক্ষার্থী অসুস্থ, প্রশাসনের আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগসহ ৭ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন ৩০ ঘণ্টা পেরিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আলোচনার প্রস্তাব দিলেও তা প্রত্যাখ্যান করে অনশন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তাঁরা। অনশনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্তত দুজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের একজনকে স্যালাইন দিতে হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগসহ ৭ দফা দাবিতে এই অনশনের ৩০ ঘণ্টা পার হয়েছে ইতিমধ্যে। আজ বৃহস্পতিবার রাত আটটায় অনশন চলার সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আলোচনার প্রস্তাব দেয় শিক্ষার্থীদের। প্রশাসন জানায়, রোববার তারা আলোচনায় বসতে চায়। তবে তাতে শিক্ষার্থীরা আশ্বস্ত হননি। তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁদের অনশন চলমান থাকবে। গতকাল বুধবার দুপুরে প্রক্টর কার্যালয়ের অধিকার সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দের ব্যানারে এই অনশন শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ৯ জন শিক্ষার্থী যুক্ত হয়েছেন অনশনে। তাঁদের মধ্যে গতকাল দুপুর ১২টায় আটজন এবং বেলা ৩টার দিকে আরও একজন যুক্ত হন।

অনশনরত শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রক্টরিয়াল বডি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তাঁরা কোনো আলোচনা বা প্রস্তাব মানবেন না। অন্যদিকে প্রশাসন জানিয়েছে, রোববার বিকেলে আলোচনায় বসতে চাইলেও শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খান বলেন, অনশনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁরা আমরণ অনশনে চালিয়ে যাচ্ছেন। রোববার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আলোচনার জন্য ডেকেছিল তাঁদের। কিন্তু অনশনরত শিক্ষার্থীরা তা মানছেন না।

অনশন চলাকালে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (ইউপিডিএফ-সমর্থিত) সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চাকমা ও গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সংগঠক ধ্রুব বড়ুয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে সুদর্শন চাকমাকে স্যালাইন দেওয়া হয়। তাঁর শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা হচ্ছে বলে জানান তিনি। অন্যদিকে ধ্রুব বড়ুয়ার রক্তচাপ কমে গেছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া অনশনরত এক শিক্ষার্থীকে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। আজ সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয়ের সামনে

অনশনরত শিক্ষার্থীদের দেখতে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক শুভাশীষ চৌধুরী বলেন, ‘একজনের রক্তচাপ একটু কম পেয়েছি। আরেকজনকে স্যালাইন দিয়েছি। সবার কিছু না কিছু সমস্যা হচ্ছে। তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে পারে।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকার সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দের ব্যানারে অনশন কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ওমর সমুদ্র, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সংগঠক ধ্রুব বড়ুয়া, শাখা বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর জশদ জাকির, সাংগঠনিক সম্পাদক রাম্রা সাইন মারমা, রাজনৈতিক শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক আহমেদ মুগ্ধ, দপ্তর সম্পাদক নাইম শাহজাহান, নারী অঙ্গনের সংগঠক ও মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া শিকদার, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের সংগঠক ঈশা দে ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (ইউপিডিএফ-সমর্থিত) সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চাকমা। এর মধ্যে জশদ জাকির বেলা তিনটার দিকে যুক্ত হয়েছেন।

প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ ছাড়া অনশনরত শিক্ষার্থীদের অন্য দাবির মধ্যে ছিল গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থীদের মানসম্মত চিকিৎসার নিশ্চয়তা, ক্যাম্পাসে নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা, হামলার ভিডিও প্রকাশকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, প্রকৃত অপরাধীদের বিচার, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমন্বয় কমিটি গঠন ও সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন।

উল্লেখ্য, স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের গত ৩০ ও ৩১ আগস্ট কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ২০০ শিক্ষার্থী আহত হন। সংঘর্ষের পর শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ দাবি করেন ‘অধিকার সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ’।