
রান্নাঘরে হাঁড়িপাতিল সরাতে গিয়ে সাপের কামড় খান চট্টগ্রামের পটিয়ার বরলিয়া ইউনিয়নের ফেরদৌস বেগম (৩৫)। সকাল ১০টার দিকে সাপে কাটার পরও তিনি দুই ঘণ্টা ঘরে ছিলেন। এ সময় ছেলে স্কুলে আর স্বামী কর্মক্ষেত্রে থাকায় বাড়িতে একাই ছিলেন ওই নারী। ঘণ্টা দুয়েক পর শারীরিক যন্ত্রণা বেড়ে যাওয়ায় বাড়ির পাশের এক ওঝার কাছে যান তিনি। সেখানে গিয়ে ওঝাকে পাননি। এ সময় অসুস্থ ওই নারীকে ছটফট করতে দেখে তাঁর স্বামী মো. রাসেলকে খবর দেন প্রতিবেশীরা।
ওই নারীর স্বামী মো. রাসেলের মুরগি বিক্রির দোকান বাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে। খবর পেয়ে সেখান থেকে রাসেল যখন এসে পৌঁছান, তখন বেলা আড়াইটা। সাপে কাটার প্রায় চার ঘণ্টা পর তাঁর স্ত্রীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান তিনি। ততক্ষণে মুমূর্ষু ফেরদৌস বেগমের শরীরে বিষের প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল। বমিও করেছেন তিনি। হাসপাতালে নেওয়ার দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যেই মৃত্যু হয় ফেরদৌস বেগমের। আজ মঙ্গলবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
বরলিয়া ইউনিয়নের বেলখাইন গ্রাম থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দূরত্ব আট কিলোমিটার। অটোরিকশায় সেখান থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছাতে লাগে বড়জোর ২০ মিনিট। চিকিৎসকেরা বলছেন, হাসপাতালটিতে সরকারের সরবরাহ করা বিনা মূল্যের অ্যান্টিভেনম রয়েছে। সাপে কাটা রোগীর জীবন রক্ষাকারী এই ওষুধ থাকার পরও ফেরদৌস বেগমকে বাঁচানো যায়নি কেবল তাঁকে দেরিতে হাসপাতালে আনা হয়েছিল বলে। অ্যান্টিভেনম তৈরির সময়ই তাঁর মৃত্যু হয় বলে চিকিৎসকেরা জানান।
পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সামিহা রওশন প্রথম আলোকে বলেন, বেলা আড়াইটার দিকে স্বামী মো. রাসেল তাঁর স্ত্রী ফেরদৌস বেগমকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এর দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ততক্ষণে সাপের বিষ দ্রুত তাঁর শরীরে ছড়িয়ে পড়ায় তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। অ্যান্টিভেনম দেওয়ার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়।
ফেরদৌস বেগমের স্বামী মো. রাসেলের ভাগনে মোহাম্মদ এয়াকুব মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মামি ফেরদৌস বেগমকে যখন সাপে কাটে, তখন ঘরে কেউ ছিলেন না। এ কারণে তিনি বুঝতে পারেননি কী করতে হবে। তাঁর মামা তখন ঘরে থাকলে আরও দ্রুত হাসপাতালে নিতে পারতেন। ওঝার কাছেও যেতে হতো না।
এয়াকুবের কাছ থেকে জানা গেল, ফেরদৌস বেগমের ১২ বছর বয়সী একটি ছেলে আছে। স্কুলে থাকায় মায়ের বিপদের সময় সে–ও সাহায্য করতে পারেনি।
সাপে কাটার কতক্ষণের মধ্যে হাসপাতালে নিলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাঁচানো যাবে, জানতে চাইলে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সামিহা রওশন বলেন, এ ক্ষেত্রে কী ধরনের সাপে কেটেছে, তার ওপর সেটা নির্ভর করে। সাধারণত বিষ শরীরে ছড়িয়ে পড়ার আগেই হাসপাতালে আনা উচিত এবং যত দ্রুত সম্ভব আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনতে হবে।
পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যথেষ্ট পরিমাণ অ্যান্টিভেনম মজুত রয়েছে বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবু তৈয়ব। তিনি বলেন, এক ডোজ অ্যান্টিভেনমের দাম ১৪ হাজার টাকা। এটি সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। ওই নারীকে দেওয়ার জন্য ওই ডোজ তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু দেওয়ার আগেই তিনি মারা যান। দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে আনা গেলে সাপে কাটা রোগীকে বাঁচানো যায়।