বয়স ৫০ ছুঁয়েছে। তবু পড়াশোনার ইচ্ছাটা মরে যায়নি জাহাঙ্গীর আলমের। তাই এবার ছেলের সঙ্গেই বসেছেন এসএসসি পরীক্ষায়। বগুড়ার ধুনট উপজেলার গোপালনগর ইউনিয়নের বিশাড়দিয়াড় গ্রামের এই ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাসুদ রানা।

কেমন আছেন?
জাহাঙ্গীর: ভালো আছি।
পরীক্ষা কেমন হচ্ছে?
জাহাঙ্গীর: ভালোই।
কোন বিষয়ে পরীক্ষা বেশি ভালো হয়েছে?
জাহাঙ্গীর: বাংলা ছাড়া বাকি সবগুলোই ভালো হয়েছে।
আপনি ও আপনার ছেলের পরীক্ষা কেন্দ্র কি একই?
জাহাঙ্গীর: না, আলাদা। আমার পরীক্ষাকেন্দ্র চিকাশি টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম ইনস্টিটিউট। ছেলের (আসিফ তালুকদার) কেন্দ্র ধুনট পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ।
আপনি কী করেন?
জাহাঙ্গীর: মথুরাপুর মুলতানি পারভীন শাহজাহান তালুকদার (এমপিএসটি) উচ্চবিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরীর চাকরি করি। ওই বিদ্যালয় থেকেই এসএসসি (কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে) পরীক্ষা দিচ্ছি।
চাকরির ফাঁকে ফাঁকে নিশ্চয়ই পড়াশোনা করতে হয়েছে।
জাহাঙ্গীর: রাতে স্কুলে বই নিয়ে যেতাম। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেখানেই পড়াশোনা করেছি।
কেউ পড়াশোনায় সহায়তা করেনি?
জাহাঙ্গীর: বড় মেয়ে পড়া দেখিয়ে দিয়েছে। যে ছেলেটা এবার এসএসসি (আসিফ তালুকদার) পরীক্ষা দিচ্ছে, সে–ও সহায়তা করেছে।
পরীক্ষা দেওয়ার চিন্তাটি কোথা থেকে এল?
জাহাঙ্গীর: ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার বিষয়ে জানতে চাইলে স্ত্রী (আকলিমা খাতুন) বলতেন, ‘আগে তোমার পড়ালেখার খবর বলো। তারপর ছেলে-মেয়ের কথা জানতে চেয়ো।’
সেই কারণেই কি জেদ করে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন?
জাহাঙ্গীর: হ্যাঁ।
সন্তানেরা কী বলত?
জাহাঙ্গীর: আমার বড় মেয়ে ফাতেমাতুজ্জোহরা বলেছিল, আব্বু, তুমি আমার সঙ্গেই লেখাপড়া করো।
বড় মেয়ে এখন কী করে?
জাহাঙ্গীর: বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে স্নাতকে পড়ে।
আপনার কয় সন্তান?
জাহাঙ্গীর: তিন সন্তান। এক মেয়ে ও দুই ছেলে। ছোট ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুন নার্সারিতে পড়ে।
ছোটবেলায় পড়াশোনা বেশি দূর করতে পারেননি কেন?
জাহাঙ্গীর: আর্থিক সংকটের কারণে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি। ১৩ বছর বয়সে মা-বাবাকে হারানোর পর কৃষিকাজ শুরু করতে হয়।
পরীক্ষা দেওয়ার কথা যখন স্কুলের শিক্ষকদের জানালেন, তাঁরা কী বলেছেন?
জাহাঙ্গীর: তাঁরা ভর্তি হতে বলেছেন।
এলাকাবাসী আপনার পরীক্ষা দেওয়া নিয়ে কিছু বলেছেন?
জাহাঙ্গীর: তাঁরা প্রশংসা করেছেন। এখন হাটবাজারেও আমার প্রশংসা।
আপনি যদি এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেন, তাহলে কি আরও পড়াশোনা করবেন?
জাহাঙ্গীর: ইচ্ছা আছে।