
গাইবান্ধায় দুটি পরিযায়ী হিমালয়ান গৃধিনী শকুন উদ্ধার করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পরিবেশবাদী সংগঠন টিম ফর এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চের (তীর) সদস্যরা আজ সোমবার দুপুরে গাইবান্ধা শহরের বানিয়ারজান থেকে একটিকে এবং আরেকটিকে গতকাল রোববার রাতে ফুলছড়ি উপজেলার উদাখালী ইউনিয়নের শান্তিরমোড় এলাকা থেকে উদ্ধার করেন। আজ দুপুরের পর শকুন দুটিকে রংপুর বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘তীর’ শকুনসহ সব বন্য প্রাণী সংরক্ষণে ২০১১ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ সংগঠনটি ‘ওয়াইল্ড লাইফ অ্যান্ড কনজারভেশন-২০২১’ পুরস্কারে ভূষিত হয়। তীরের সদস্যরা জানান, আজ বেলা ১১টার দিকে হিমালয়ান গৃধিনী প্রজাতির একটি অসুস্থ শকুন বানিয়ারজান এলাকায় পড়ে থাকতে দেখেন এলাকাবাসী। এর আগে স্থানীয় লোকজন রাত ১০টার দিকে শান্তিরমোড় এলাকায় একই প্রজাতির আরেকটি অসুস্থ শকুনকে পড়ে থাকতে দেখেন ওই এলাকার লোকজন। খবর পেয়ে তীরের গাইবান্ধা সরকারি কলেজ শাখার সদস্যরা শকুন দুটিকে উদ্ধার করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তীরের গাইবান্ধা সরকারি কলেজ শাখার সভাপতি মোশারফ হোসেন তীরের গাইবান্ধা সরকারি কলেজ শাখার সাবেক সভাপতি জিসান মাহমুদ, বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহীম, প্রচার সম্পাদক মেজবাহুল হক প্রমুখ।
পরে তীরের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হোসেন রহমান প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর জোট আইইউসিএনের শকুন সংরক্ষণ প্রকল্পের মুখ্য গবেষক সারোয়ার আলম ও গাইবান্ধা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শরিফুল ইসলামকে হিমালয়ান গৃধিনী শকুন উদ্ধারের বিষয়টি জানান। তাঁদের সহায়তায় ও পরামর্শে শকুন দুটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর আজ দুপুরে রংপুর বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেখানে প্রাথমিক পরিচর্যার পর দিনাজপুরের সিংড়া জাতীয় উদ্যানে শকুন উদ্ধার ও পরিচর্যাকেন্দ্রে হস্তান্তর করা হবে।
তীরের উপদেষ্টা ও গাইবান্ধা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ খলিলুর রহমান বলেন, শকুন দুটি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে ও কিছুটা ঠান্ডার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ফলে তারা উড়তে পারেনি। শকুন মৃত প্রাণীদের মাংস খেয়ে বেঁচে থাকে। শকুন ‘প্রকৃতির ঝাড়ুদার পাখি’ হিসেবে পরিচিত। তাদের কারণে মানুষ নানান রোগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা পায়।
রাজশাহী বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন্য প্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, হিমালয়ান গৃধিনী শকুন দীর্ঘ পথ পেরিয়ে বাংলাদেশে এসে ক্লান্ত অবস্থায় তারা এক জায়গায় বিশ্রামের জন্য ঘাপটি মেরে থাকে। তখন লোকজন অসুস্থ ভেবে এগুলোকে ধরে ফেলে। তিনি বলেন, হিমালয়ের ঠান্ডা ও হিমঝড়ের কারণে নভেম্বর-ডিসেম্বরের দিকে হিমালয়ান গৃধিনী শকুন ঠান্ডা সহ্য করতে না পেরে সমতলের দিকে আসে। মার্চের দিকে গরম শুরু হলে তারা আবার চলে যায়। তিনি আরও বলেন, প্রচারণার ফলে বর্তমানে উত্তরাঞ্চলের যেকোনো স্থানে অসুস্থ শকুন পেলে স্থানীয় লোকজন তীরের মতো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের কাছে খবর দেন। স্বেচ্ছাসেবীরা সেগুলো উদ্ধার করে প্রাথমিক পরিচর্যার পর বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করছেন।
তীর গাইবান্ধা সরকারি কলেজ শাখার সভাপতি মোশারফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে সাত প্রজাতির শকুন ছিল। এর মধ্যে রাজশকুন পুরোপুরি বিপন্ন হয়ে গেছে। এ দেশের স্থায়ী বাংলা শকুন ও সরুঠোঁটি শকুনও রয়েছে খুব কম। আইইউসিএনের হিসাবে, দেশে ২৬০টির মতো বাংলা শকুন টিকে আছে। এ ছাড়া দেশে তিন প্রজাতির পরিযায়ী শকুন দেখা যায়। এর মধ্যে হিমালয়ান গৃধিনী অন্যতম।