Thank you for trying Sticky AMP!!

দোকান, বাজারে দেদার পলিথিনের ব্যবহার 

  • বিভিন্ন বাজারের মনিহারির দোকানে লুকিয়ে পলিথিন বিক্রি করা হয়। 

  • কাগজের খামের চাহিদা কম থাকায় পুরোনো পত্রিকার দাম কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। 

নেত্রকোনায় ‘নিষিদ্ধ’ পলিথিনের ব্যবহার আবার বাড়ছে। জেলা শহর ধরে ১০টি উপজেলার ছোট-বড় বাজারে এখন দেদার বিক্রি ও ব্যবহার করা হচ্ছে পলিথিন। জেলার কিছু দোকানে লুকিয়ে পলিথিন বিক্রি করা হচ্ছে। অথচ গত তিন বছর আগে নেত্রকোনাসহ পুরো ময়মনসিংহ বিভাগকে ‘পলিথিনমুক্ত’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। 

 ২০০২ সালের ৮ এপ্রিল পরিবেশ অধিদপ্তরও এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পলিথিনের সব ধরনের শপিং ব্যাগ উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রি ও বিক্রির জন্য প্রদর্শন, মজুত ও বিতরণ নিষিদ্ধ করে। 

তিন বছর আগে নেত্রকোনাসহ পুরো ময়মনসিংহ বিভাগকে ‘পলিথিনমুক্ত’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। 

জেলায় পরিবেশ নিয়ে কাজ করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘জনউদ্যোগ’। এ সংগঠনের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী বলেন, বাজারের প্রায় প্রতিটি দোকানেই এখন পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার হচ্ছে। নিষিদ্ধ এই পলিথিন ব্যবহারে একদিকে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে শহরে ময়লা–আবর্জনা জমে ড্রেন বন্ধ হয়ে আছে। মগরা নদীটিও পলিথিনে ছেয়ে আছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। 

জেলার কয়েকটি বাজার ঘুরে ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহরের আখড়া বাজার, মাছ বাজার, ঘুষের বাজার, রেলক্রসিংয়ের বাজার, কলমাকান্দা উপজেলার সদরের মধ্যবাজার, মাছ বাজার, পাগলা বাজার, নাজিরপুর বাজার, দুর্গাপুরের কাঁচাবাজার, কুমুদগঞ্জ বাজার, পূর্বধলার জামতলা বাজার, রেলস্টেশন বাজার, মোহনগঞ্জের মধ্যবাজার, স্টেশন রোড বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে পলিথিন ব্যাগেই মালামাল বহন করা হচ্ছে। 

মাছ বাজারের কয়েকজন সবজি বিক্রেতা জানান, বাজারের বেশ কয়েকটি মনিহারির দোকানে লুকিয়ে পলিথিন বিক্রি করা হয়। প্রতি কেজি পলিথিন ২৬০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। 

ঘুষের বাজারের তরকারি বিক্রেতা মো. রফিকুল বলেন, বেশির ভাগ ক্রেতাই বাজারে ব্যাগ নিয়ে আসেন না। এলেও আলাদা আলাদা করে পলিথিনে মাল ভরে দিতে হয়। না দিলে তারা দোকান থেকে কিছু কিনতে চান না। 

শহরের উকিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. আলমগীর বলেন, বাজার থেকে কোনো কিছু কেনার পর দোকানদার তা পলিথিন ব্যাগে ভরে দেন। ফলে তাঁরা সেগুলোই ব্যবহার করছেন। 

স্থানীয় লোকজন বলেন, পলিথিন ব্যাগের বিকল্প হিসেবে বাজারে কাগজের ঠোঙা (খাম), চটের ব্যাগ, নেটের ব্যাগ, ঝুড়ি ইত্যাদি ব্যবহার করা হতো। বিশেষ করে খাবারের হোটেলে কাগজের ঠোঙা ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন আবার পলিথিন সহজে কিনতে পাওয়ায় কাগজের থলের চাহিদা কমে গেছে। 

জেলা সংবাদপত্র পরিবেশক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, বাজারে পলিথিনের ব্যবহার বেশি হওয়ায় কাগজের খামের চাহিদা কম। এতে করে পুরোনো পত্রিকার কাগজের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা কমে এসেছে। আগে যে কাগজ ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হতো, বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ২৮ থেকে ৩২ টাকায়। 

কৃষিবিদ মোহাম্মদ ফকরুজ্জামান জুয়েল বলেন, পলিথিন সহজে পচে না। এটি পলিইথাইনিল নামে একটি রাসায়নিক পদার্থ। এটি পানিরোধক বলে জমিতে ব্যাকটেরিয়া তৈরিতে বাধা দেয়। ফলে জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়। এটি মানবদেহের জন্যও ক্ষতিকর। এর ব্যবহারে ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগ হতে পারে। 

জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী লুকিয়ে পলিথিন বিক্রি করছে। তাঁদের খোঁজা হচ্ছে। কিছুদিন পরপর পলিথিনের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। গ্রামের বাজারগুলোতেও অভিযান অব্যাহত রাখতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।