শেরপুরের ঝিনাইগাতীর গোমড়া গ্রামে আগাম সবজির আবাদ করেন স্থানীয় লোকজন। এসব সবজির চাহিদা বেশি থাকায় লাভও ভালো হয়
শেরপুরের ঝিনাইগাতীর গোমড়া গ্রামে আগাম সবজির আবাদ করেন স্থানীয় লোকজন। এসব সবজির চাহিদা বেশি থাকায় লাভও ভালো হয়

শেরপুরের গোমড়া গ্রামে হাসি এনেছে আগাম সবজি

ছবি: Sherpur_DH0561_20250818_Nalitabari pic(8)18.08.2025

ক্যাপশন:

গারো পাহাড়ের ঢালে ১০ শতাংশ জমিতে সারা বছর সবজি চাষ করেন জমির উদ্দিন ও আফরোজা বেগম দম্পতি। জমির সাত শতাংশে কাঁকরোল এবং তিন শতাংশে চিচিঙ্গা ও লাউয়ের বাগান।

খেতে খুঁটি পুঁতে ওপরে জাল দিয়ে মাচা তৈরি করা হয়েছে। মাচায় ঝুলছে সবজি। খেতের ফাঁকে ফাঁকে দুই প্রকারের শিমগাছ কঞ্চি বেয়ে মাচার দিকে বেড়ে উঠছে। নিচের অংশে ৩-৪ ফুট দূরত্বে আদা ও হলুদের চাষও করা হয়েছে।

এভাবে সারা বছর শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্তবর্তী গোমড়া গ্রামের পাহাড়ের ঢালে আগাম জাতের নানা সবজির আবাদ হয়। তিন শতাধিক পরিবার এই আবাদের সঙ্গে যুক্ত। এর মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তাঁরা।

বাজারে নতুন সবজি ওঠায় দাম বেশি থাকে। খরচ বাদে লাভ বেশি হয়।
আফরোজা, গৃহবধূ, গোমড়া গ্রাম

গোমড়া গ্রামের একাধিক কৃষক বলেন, একসময় এখানকার মানুষ ধান চাষের ওপর নির্ভরশীল ছিল। কয়েকজন ধান চাষের পাশাপাশি সবজি চাষ করে ভালো ফলন পেতেন। তাঁদের দেখাদেখি এখন গ্রামের সবাই সারা বছর নানা জাতের আগাম সবজি চাষ করেন। কেউ নিজের জমিতে, কেউ বর্গা নিয়ে সবজি চাষ করেন।

গোমড়া গ্রামের কেউ নিজের জমিতে, কেউ বর্গা নিয়ে সবজি চাষ করেন

বর্তমানে করলা, কাঁকরোল ও চিচিঙ্গা প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন বরবটি, লাউ ও বেগুন তোলা হচ্ছে। এক সপ্তাহের মধ্যে দুই ধরনের শিম তোলা শুরু করবেন চাষিরা। এ ছাড়া আদা, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, কলা, ঢ্যাঁড়শ, ফুলকপি, পটোল, পাতাকপি, টমেটো, গাজর, ধনেপাতার চাষ করা হচ্ছে। বাড়ির সবাই মিলে চাষাবাদ করেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, সীমান্ত সড়ক থেকে মাত্র ৩০০ মিটার উত্তরে পাহাড়ের ঢাল ঘেঁষে গোমড়া গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা। রাস্তার দুই পাশে আবাদ ছাড়া কোনো জমি পতিত নেই। পাহাড়ের ঢাল, বাড়ির আঙিনা, উঠোন—সব জায়গাতেই সবজি চাষ করা হয়েছে।

গ্রামের অনেক কৃষক নিজেই বাগানের পরিচর্যা করছেন। কেউ কেউ শ্রমিক দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মানুষ ব্যস্ত—সবজি রোপণ, পানি দেওয়া, আগাছা পরিষ্কার, গোড়া সাফ ও সবজি সংগ্রহে। বাগান থেকে তোলা সবজি রাস্তার পাশে বসে সরাসরি বিক্রি করছেন অনেকে। অনেকে আবার বাজারে নিয়ে বিক্রির জন্য ছোট ছোট বস্তায় সবজি ভরছেন।

স্থানীয় গৃহবধূ আফরোজা বলেন, এখন কাঁকরোল ও চিচিঙ্গা শেষের দিকে। শিমগাছ বড় হয়ে উঠেছে। কাঁকরোলগাছ কাটার পর এই জালেই শিম গাছ উঠবে, নতুন মাচা দেওয়ার দরকার হয় না। বাজারে নতুন সবজি ওঠায় দাম বেশি থাকে। খরচ বাদে লাভ বেশি হয়।

পরিবারের সবাই মিলে সবজিখেতের পরিচর্যা করেন

মৌসুমের শুরুতেই সবজি উঠলে স্থানীয় পাইকারেরা বাড়ি থেকে সরাসরি সবজি কিনে নিয়ে যান বলে জানালেন স্থানীয় কৃষক মো. রফিক মিয়া। এ ছাড়া সন্ধ্যাকুড়া ও হলদিগ্রামের সীমান্ত সড়কে সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত সবজির হাট বসে। এখানে পাইকারেরা সবজি কিনে ট্রাকে করে ঢাকার কারওয়ান বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন।

অন্যান্য ফসলের তুলনায় আগাম সবজি চাষে লাভ বেশি। বিষয়টি বুঝতে পেরে গোমড়া গ্রামের ধনী-গরিব সবাই সবজি চাষে ঝুঁকেছেন।
মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন, ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা

হানিফ উদ্দিন নামের এক কৃষক বলেন, এ গ্রামে সবাই আগাম জাতের সবজি চাষ করেন। এতে ক্রেতাদের কাছে সবজির চাহিদা বেশি থাকে, দামও ভালো পাওয়া যায়। ফলে বছরজুড়েই সবজির আবাদ হয় এই গ্রামে।

গোমড়া গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকায় সবজির খেত। আবাদ ছাড়া কোনো জমি পতিত নেই

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, অন্যান্য ফসলের তুলনায় আগাম সবজি চাষে লাভ বেশি। বিষয়টি বুঝতে পেরে গোমড়া গ্রামের ধনী-গরিব সবাই সবজি চাষে ঝুঁকেছেন। এখানকার সবজি স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আধুনিক পদ্ধতিতে সবজি চাষ ও রোগবালাই দূর করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।