ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। শনিবার দুপুরে প্রশাসন ভবনের সামনে
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। শনিবার দুপুরে প্রশাসন ভবনের সামনে

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে মধ্যরাতে হলে হলে বিক্ষোভ, দিনে উত্তাল ক্যাম্পাস

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজিদ আবদুল্লাহর মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে মধ্যরাত থেকে আজ শনিবার দিনভর ক্যাম্পাস উত্তাল। গতকাল শুক্রবার রাতে তিনটি ছাত্রী হলে বিক্ষোভের পর আজ সকাল থেকে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে জড়ো হন। বেলা দুইটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলছিল।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের কাছে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেন। বিক্ষোভে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিভাগের শিক্ষার্থীরা যোগ দিয়েছেন। কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন সংহতি প্রকাশ করে অংশ নিয়েছে। কয়েকটি বিভাগের শিক্ষকেরাও একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।

ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল মাঠে সাজিদ আবদুল্লাহর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। এ সময় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দেওয়া হয়। বেশ কিছু শিক্ষার্থী প্রশাসন ভবনের দ্বিতীয় তলায় ওঠার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে নিচের ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাঁরা শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। মৃত্যুকে রহস্যজনক আখ্যা দিয়ে এর পেছনে প্রশাসনের দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগ তোলা হয়। এই মৃত্যুর ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্‌ঘাটন না করা পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণাও দেন শিক্ষার্থীরা।

আজ সকাল থেকে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে জড়ো হন

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পুকুরে লাশ দেখে প্রশাসনকে জানানো হয়েছিল। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পর সেই লাশ উদ্ধার করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে থানা থাকলেও পুলিশ আসতে দেরি করেছে। লাশ উদ্ধারের প্রায় আধা ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও সেখানে কোনো চিকিৎসক বা অ্যাম্বুলেন্স আসেনি। বাধ্য হয়ে ভ্যানে করে ওই শিক্ষার্থীকে মেডিকেলে নেওয়া হয়। লাশ শনাক্তের দুই ঘণ্টার মধ্যেও প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা কিংবা হল প্রভোস্টের দেখা মেলেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোয় কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা সচল নেই। একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন নিরাপত্তার ঘাটতি মোটেও কাম্য নয়। প্রশাসনকে বারবার বলার পরেও তারা বাজেট–ঘাটতির কথা বলে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগাচ্ছে না।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো সাজিদের মৃত্যুর তদন্ত দ্রুত সময়ে সম্পন্ন করে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা; পুরো ক্যাম্পাস সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা; আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের প্রবেশ-বাহির শতভাগ নজরদারির আওতায় আনা; ক্যাম্পাসের চারপাশে পূর্ণাঙ্গ সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা; ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সড়কবাতি স্থাপন করা এবং বহিরাগত প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ নিয়ন্ত্রণ করা। দাবি বাস্তবায়ন না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ দেশের বাইরে আছেন। জানতে চাইলে সহউপাচার্য এম এয়াকুব আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপাচার্য ১২ দিনের সফরে ইংল্যান্ডে আছেন। আমি সহ–উপাচার্য হিসেবে রুটিন ওয়ার্ক করছি। আমি বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের আমলে প্রধান উপদেষ্টা থেকে একটা পিয়ন পর্যন্ত সবার নিরাপত্তা ছাত্রদের হাতে। তারা নিরাপত্তা না দিলে আমরা পদে থাকতে পারব না। আমরা উল্টো তাদের কী নিরাপত্তা দেব? আমাদের সাপোর্ট নাই। আমরা সীমিত জনবল নিয়ে চালাচ্ছি। আমাদের দৃষ্টিতে এখানে প্রশাসনের কোনো গাফিলতি নাই। আমরা সঠিকভাবে সঠিক সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছি। তারা যদি অভিযোগ করে আমাদের কিছুই করার নাই। আমরা কোনো গাফিলতি করিনি।’

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। শনিবার দুপুরে

ছাত্রশিবিরের ‘টর্চলাইট’ মিছিল

গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে ক্যাম্পাসে ‘টর্চলাইট’ মিছিল করেন শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা। সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আমরা আজ একত্রিত হয়েছি, আমার ভাই সাজিদের বিচারের দাবিতে। সাজিদকে নিয়ে কোনো রাজনীতির আশ্রয় নেওয়া যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ অন্যান্য প্রশাসনকে দ্রুত তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে হবে। এতে দেরি হলে বিশ্ববিদ্যালয়কে অচল করে দেওয়া হবে।’

তিনটি ছাত্রী হলে বিক্ষোভ

সাজিদ আবদুল্লাহর মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে মধ্যরাতে বিক্ষোভ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা। রাত ১২টার দিকে খালেদা জিয়া হল, উম্মুল মোমেনিন আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) হল ও জুলাই ৩৬ হলের আবাসিক ছাত্রীরা বিক্ষোভ করেন।

বিক্ষোভে ছাত্রীরা ‘তুমি কে, আমি কে, সাজিদ সাজিদ’, ‘পুকুরে লাশ কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘ক্যাম্পাস কেন অরক্ষিত, প্রশাসন জবাব দে’, ‘পুকুরেতে ভাসছে লাশ, প্রশাসনের নেই লাজ’ ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়।