Thank you for trying Sticky AMP!!

ছোট ভাইয়ের বিরোধিতার মুখে লতিফ সিদ্দিকী

গত ১৯ সেপ্টেম্বর লতিফ সিদ্দিকী তাঁর সমর্থকদের নিয়ে কালিহাতীতে গণসংযোগ শুরু করেন।

মা–বাবার কবর জিয়ারতের সময় কাদের সিদ্দিকী ও লতিফ সিদ্দিকী

আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী তাঁর নিজ এলাকা কালিহাতীর রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রত্যাবর্তন করেছেন। মাঠে নেমেই তিনি আপন ভাই মুরাদ সিদ্দিকী ও টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় বর্তমান সংসদ সদস্য হাসান ইমাম খানের বিরোধিতার মুখে পড়েছেন।

লতিফ সিদ্দিকী তাঁর অপর দুই ভাই কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এবং শামীম আল মনসুর ওরফে আজাদ সিদ্দিকীর সমর্থন ও সহযোগিতা পাচ্ছেন।

মুরাদ সিদ্দিকী ও হাসানের বিরোধিতার বিষয়ে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার কোনো মন্তব্য নেই। যে কারও স্বাধীনতা আছে মতামত দেওয়ার। তাঁরা দিতে পারেন।’

গত শুক্রবার লতিফ সিদ্দিকী তাঁর স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকী, ভাই কাদের সিদ্দিকী, আজাদ সিদ্দিকী, বোন রহিমা সিদ্দিকীকে সঙ্গে নিয়ে কালিহাতীর ছাতিহাটি গ্রামে বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করেন। এর আগে সেখানে সমবেতদের উদ্দেশে লতিফ সিদ্দিকী, কাদের সিদ্দিকী ও আজাদ সিদ্দিকী বক্তৃতা করেন। এ সময় তাঁদের সঙ্গে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন। পরে ওই দিন বিকেলে লতিফ সিদ্দিকী বল্লা ও রামপুর এলাকায় গণসংযোগ করেন।

এর আগে গত ১৯ সেপ্টেম্বর লতিফ সিদ্দিকী তাঁর সমর্থকদের নিয়ে কালিহাতীতে গণসংযোগ শুরু করেন। ওই দিন গণসংযোগ করতে এসেই মুরাদ সিদ্দিকীর প্রতিরোধের মুখে পড়েন। লতিফ সিদ্দিকী ২০টি গাড়িবহর নিয়ে দেলদুয়ারের আটিয়ায় শাহান শাহ আদম কাশ্মীরির মাজার জিয়ারত করতে যান। মাজারের কাছে মুরাদ সিদ্দিকী তাঁদের বাধা দেন।

লতিফ সিদ্দিকীর সমর্থকদের অভিযোগ, এই কর্মসূচি ঘোষণার কয়েক দিন আগে থেকেই মুরাদ সিদ্দিকী তাঁদের লতিফ সিদ্দিকীর সঙ্গে না যাওয়ার জন্য বলছিলেন। তাঁর নির্দেশ উপেক্ষা করে যাঁরা গেছেন, তাঁদের ওই দিন মাজারের কাছে গাড়ি থেকে নামিয়ে লাঞ্ছিত করেন।

মুরাদ সিদ্দিকীর সমর্থকদের অভিযোগ, লতিফ সিদ্দিকীর সমর্থকেরা মুরাদ সিদ্দিকীর বহরে থাকা গাড়ির ওপর হামলা করেছেন।

ওই ঘটনার পর মুরাদ সিদ্দিকী কালিহাতীর কয়েক জায়গায় গণসংযোগ করেছেন। এসব গণসংযোগকালে তিনি লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে বক্তৃতা করেন। এ প্রসঙ্গে মুরাদ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘লতিফ সিদ্দিকী কালিহাতীতে বিভ্রান্তি ছড়াতে এসেছেন। তিনি নিজেকে এখনো আওয়ামী লীগার দাবি করেন। আসলে তিনি কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের হয়ে এসেছেন। আমি আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বাস করি। তিনি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিভ্রান্ত করুন, তা আমি চাই না।’

শুধু মুরাদ সিদ্দিকী নন, হাসান ইমামও নির্বাচন সামনে রেখে লতিফ সিদ্দিকীর প্রত্যাবর্তনকে ভালোভাবে নেননি। লতিফ সিদ্দিকী কালিহাতী আসার পর হাসান ইমাম কয়েকটি সমাবেশ করেছেন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে। সেখানে তিনি লতিফ সিদ্দিকীর সমালোচনা করেছেন।

হাসান ইমাম বলেন, ‘লতিফ সিদ্দিকী দল থেকে বহিষ্কৃত। উনি এখন আওয়ামী লীগের কেউ নন। উনাকে ছাড়াই কালিহাতীর আওয়ামী লীগ বিএনপি-জামায়াত অপশক্তিকে মোকাবিলা করতে সক্ষম। লতিফ সিদ্দিকী মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন। উনি আওয়ামী লীগের হয়ে কথা বললে দলের ক্ষতি হবে।’

এ প্রসঙ্গে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি প্রয়োজন মনে করেছি যে বিএনপি যা বলছে, তা প্রতিরোধ করা দরকার। প্রত্যাঘাত নয়, প্রতি-আক্রমণও নয়। জনশক্তি দিয়ে জনমত তৈরি করে তাদের প্রতিহত করা। আমার রাজনৈতিক চৈতন্য আমাকে আদেশ করেছে, আমি সেই জন্য কালিহাতীতে গণসংযোগ করছি। আমি নির্বাচন নিয়ে এখনো কোনো ভাবনা ভাবিনি। ওটা শেখ হাসিনা ভেবে দেখবেন, কী করবেন না করবেন।’

লতিফ সিদ্দিকীর কালিহাতীতে প্রত্যাবর্তন, মুরাদ সিদ্দিকী ও হাসান ইমাম খানের বিরোধিতা প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজাহারুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘লতিফ সিদ্দিকী ও মুরাদ সিদ্দিকী তাঁরা এখন দলের কেউ নন। তাই তাঁদের নিয়ে কোনো মন্তব্য করব না।’

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে একটি সভায় হজ, তাবলিগ জামাত ও প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করে মন্ত্রিত্ব হারান লতিফ সিদ্দিকী। তখন তাঁকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যপদ থেকে এবং পরে প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও বহিষ্কার করা হয়। দেশে ফেরার পর তাঁকে কারাগারেও যেতে হয়। পরে তিনি সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন।