Thank you for trying Sticky AMP!!

শিশুদের জন্য কাঠ দিয়ে তৈরি করা সাইকেল

‘বেবি বাইক’ যাচ্ছে ইউরোপে

এই বিশেষ ধরনের সাইকেল তৈরি হচ্ছে বাগেরহাট বিসিকের একটি কারখানায়। পরিবেশবান্ধব এই সাইকেলের চাহিদা রয়েছে ইউরোপে।

নারকেল তেল উৎপাদনের ব্যবসা করতে গিয়ে দেখেন লাখ লাখ নারকেলের ছোবড়া ফেলে দিতে হচ্ছে। দুই দশক আগে সেখান থেকেই ফেলনা ছোবড়া কাজে লাগানোর কৌশল খুঁজতে শুরু করেন । একপর্যায়ে সেই কৌশলও আবিষ্কার করেন। এর ভিত্তিতে ২০০২ সালে বাগেরহাটের বিসিক শিল্প নগরীতে ফেলনা ছোবড়া দিয়ে যন্ত্রে তৈরি তোশকের (ম্যাট্রেস) ভেতরের অংশ বা ‘কয়ার ফেল্ট’ উৎপাদনের উদ্যোগ নেন তিনি। ২০০৫ সালে উৎপাদনের যায় তার কয়ার ফেল্ট কারখানা। শুরু হয় অপ্রচলিত এই পণ্য রপ্তানি।

কয়ার ফেল্টসহ বিভিন্ন উদ্ভাবনী পণ্য  নিয়ে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া এই উদ্যমী উদ্যোক্তার নাম মোস্তাফিজ আহমেদ (৫৭)। একসময় তাঁর ছোট ভাই মোজাহিদ আহমেদও (৫৪) এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন। ন্যাচারাল ফাইবার নামের তাঁদের প্রতিষ্ঠান করোনা মহামারির সময় জাহাজভাড়া বৃদ্ধি, ক্রয়াদেশ বাতিলসহ নানা সংকটে পড়ে। তবে তা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগেনি খুব বেশি দিন। আবারও নতুন উদ্ভাবনী পণ্য নিয়ে হাজির হন তাঁরা।

গত বছর থেকে নারকেলের ছোবড়ার তৈরি আরেক নতুন পণ্য একবার ব্যবহৃত ‘ডিসপোজেবল স্লিপা’র দিয়ে আবারও ইউরোপের রপ্তানি শুরু করেন তাঁরা। সেই ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠানটি এবার উৎপাদন ও রপ্তানি শুরু করেছে বাচ্চাদের জন্য কাঠের তৈরি ‘বেবি ব্যালান্স সাইকেল’, পোষা প্রাণীর খেলনাসহ নারকেলের ছোবড়ার তৈরি আরও বেশ কিছু নতুন পণ্য।

ন্যাচারাল ফাইবার কারখানা সূত্রে জানা গেছে, বিসিকের কারখানাটিতে প্রতিদিন প্রায় অর্ধশত কর্মী ৮০ থেকে ১০০টি পর্যন্ত কাঠের সাইকেল তৈরি করছেন। ছোটদের সাইকেল দিয়ে শুরু হলেও এখন তাঁরা বড়দের জন্যও কাঠের সাইকেল তৈরির কাজ শুরু করছেন। পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে পোষা প্রাণীর খেলনাসহ বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব পণ্য।

সেখানকার সাইকেল তৈরির কারিগর শরিফুল তরফদার বলেন, কাঠের আলাদা ১১টি অংশ দিয়ে এই সাইকেল তৈরি করা হয়। আলাদাভাবে এগুলো তৈরি করে সংযোজন করেন তাঁরা। এরপর রং করে কার্টন ভর্তি হয়ে যায় বিদেশে।

উদ্যোক্তারা জানান, কারখানাটিতে বর্তমানে চারটি প্রকল্পের শতাধিক শ্রমিক কাজ করছেন। এই শ্রমিকদের তাঁরা নিজেরাই প্রশিক্ষিত করেছেন। কাঠের তৈরি আরও নতুন ধরনের বিভিন্ন পণ্য নিয়ে আসছেন তাঁরা। এ জন্য কররী গ্রামে তাঁরা কারখানার একটি নতুন ইউনিটও চালু করছেন। যাতে স্থানীয় আরও শতাধিক লোকের কর্মসংস্থানের আশা তাঁদের।

কারখানার অন্যতম উদ্যোক্তা মোস্তাফিজ আহমেদ বলেন, ‘করোনা শুরু পর প্রায় দুই বছর ধরে আমাদের দুটি কারখানাই বন্ধ ছিল। তখন আমরা চেষ্টা শুরু করি নতুন পণ্য নিয়ে বাজারে আসার। এ জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইটে আমাদের নানা পণ্যের বিজ্ঞাপন দিই। ওই বিজ্ঞাপন দেখে একদিন গ্রিসের ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান “কোকো–ম্যাট” আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারা আমাদের কাছে নতুন ধরনের পণ্য, “ডিসপোজেবল হোটেল স্লিপারের” চাহিদা দেয়।  ডিসপোজেবল হোটেল স্লিপার, খেলনা পুতুল নেওয়ার পর গত বছরই প্রতিষ্ঠানটি তাদের দেওয়া পরিবেশবান্ধব সাইকেলের নকশা পছন্দ করে ২০ হাজারটির ক্রয়াদেশ দেয়। যা ইতিমধ্যে রপ্তানি করা হয়েছে। আগামী কয়েক মাসে ‍যাবে আরও ২০ হাজার সাইকেল।

বেবি ব্যালান্স সাইকেল—এক বিশেষ ধরনের সাইকেল। এতে কোনো প্যাডেল নেই। সাধারণত শিশুর যখন হাঁটতে শেখে, তখন তাদের এই সাইকেল দেওয়া হয়। এর উচ্চতা ২০ ইঞ্চি। এটি ৩৩ ইঞ্চি লম্বা। একটি সাইকেল বানাতে এক থেকে দুই দিন লাগে।

মোস্তাফিজ আহমেদ আরও জানান, প্রতিষ্ঠানটি এখন তাদের কাছ থেকে চিড়িয়াখানায় হাতি বাঁধার খুঁটি, চেয়ারসহ আরও বেশ কিছু পণ্য নিতে আগ্রহী। কররীর কারখানাতে এগুলো তৈরি করবেন তাঁরা।

সম্প্রতি কোকো–ম্যাটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পল এমোফেডিস দ্বিতীয়বার বাগেরহাটে ন্যাচারাল ফাইবার কারখানায় এসেছেন উৎপানিত পণ্য দেখতে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি গ্রিক নাগরিক হলেও এখন অর্ধেক বাংলাদেশি। এখানের কর্মীরা আমাকে মুগ্ধ করেছেন। তাঁরা নতুন নতুন আইডিয়া ও উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করছেন। নানা নতুন পণ্য নিয়ে কাজ করছেন। আমি তাঁদের সঙ্গে নতুন উদ্যোগ নিতে চাই। আমরা চাই নতুন প্রজন্ম প্লাস্টিকের স্পর্শে না আসুক। সে জন্য আমরা শিশুদের খেলনা থেকে শুরু করে আরও অনেক পণ্য নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চাই।’