চেয়ারম্যানের দুর্নীতির বিষয়ে সাক্ষ্য দেওয়া দুই ইউপি সদস্যকে হাতুরিপেটার অভিযোগ

বরগুনা জেলার মানচিত্র
বরগুনা জেলার মানচিত্র

বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজিজুল হক ওরফে স্বপনের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষ্য দেওয়া দুই ইউপি সদস্যকে হাতুরিপেটার অভিযোগ উঠেছে। এই দুই ইউপি সদস্য হলেন গোলাম ফরিদ (৪০) ও কবির হোসেন (৩৫)। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর ইউনিয়নের খাজুরা এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে।

চেয়ারম্যান আজিজুল হকের নির্দেশে এ হামলা হয়েছে বলে দাবি করছেন ওই দুই ইউপি সদস্য। আহত দুজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল রাতেই দুই ইউপি সদস্যের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে লিখিত অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ বিস্তারিত কিছু জানায়নি।

বরগুনা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাইনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুই ইউপি সদস্যকে মারধরের ঘটনায় গতকাল দিবাগত রাত ২টার দিকে একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

গোলাম ফরিদের বাবা আবদুল বারেকের ভাষ্য, গতকাল সন্ধ্যায় ফরিদ ও কবির একই মোটরসাইকেলে বরগুনা শহরে যাচ্ছিলেন। পথে ইউনিয়নের খাজুরা এলাকায় পৌঁছালে চেয়ারম্যান আজিজুল হকের ব্যক্তিগত গাড়ির চালক রিয়াজ, কিরণসহ ১০–১২ জন লোক তাঁদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তাঁদের বেধরক মারধর ও হাতুরিপেটা করা হয়। পরে স্থানীয় লোকজন ফরিদ ও কবিরকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে সেখানকার চিকিৎসকেরা তাঁদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালে পাঠান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি ঢলুয়া ইউপির ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের ইউপি সদস্য খাদিজা আক্তার চেয়ারম্যান আজিজুল হকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি–অনিয়মের বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। লিখিত অভিযোগে খাদিজা আক্তার দাবি করেন, চেয়ারম্যান আজিজুল হক বিভিন্ন সরকারি সহায়তা বিতরণের কথা বলে উপকারভোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন।

করোনাকালে সরকারি প্রণোদনার টাকা দুস্থদের মধ্যে বিতরণ না করে ভুয়া মাস্টার রোল দাখিল করে সেই টাকা আত্মসাৎ এবং টিসিবির পণ্য বিতরণের জন্য হতদরিদ্রদের তালিকা প্রণয়নের কথা বলে মানুষের কাছ থেকে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা নেন। এ ছাড়া কর্মসৃজন প্রকল্পের ৪০ দিনের কর্মসূচির জন্য শ্রমিকের তালিকা করে তাঁদের নামে নগদ হিসাব খুলে শ্রমিকদের সিম কার্ড নিজের কাছে রেখে দেন। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়কে এসব অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

পরে তদন্ত শুরু হলে দুই ইউপি সদস্য ফরিদ ও কবির এ বিষয় সাক্ষ্য দেন। ফরিদের বাবা আবদুল বারেক বলেন, ‘চেয়ারম্যানের দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে নানা সময় চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার ছেলের বিভিন্ন কথায় বিরোধ হয়েছিল। কিন্তু তিনি (চেয়ারম্যান) কেন এই মারধর করালেন? মানুষ কি অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে না? প্রতিবাদ করার কি অধিকার নাই? দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে সাক্ষ্য দিলেই তাঁকে মারধর করতে হবে? এমন নির্মম নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’

বরগুনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইমরুল কায়েসও দাবি করেন, চেয়ারম্যান আজিজুল হকের নির্দেশে এ হামলা হয়েছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গোলাম ফরিদ ও কবির হোসেন তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। এতে চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়েছেন। তাই চেয়ারম্যান তাঁর লোকজন দিয়ে হামলা চালিয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত সোমবার হৃদয় নামের এক যুবককে কবির ও ফরিদ মারধর করেন। এর জেরে গতকাল কবির ও ফরিদকে প্রতিপক্ষের লোকজন মারধর করেছেন। এখানে আমার কোনো হাত নেই। আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’