খুলনার পশুর হাট

১০ লাখ টাকার গরুর সঙ্গে খাসি ফ্রি, জমে উঠছে পশুর হাট

কোরবানির পশুর হাটে গরুটিকে সাজাতে গায়ে, গলায় জরির মালা পরাচ্ছেন বিক্রেতা।  জোড়াগেট, খুলনা, ২৬ জুন।
 ছবি: প্রথম আলো

খুলনা নগরের জোড়াগেট এলাকায় অবস্থিত পশুর হাটে এখনো কেনাবেচা ব্যাপক হারে শুরু হয়নি। তবে আস্তে আস্তে হাট জমে উঠতে শুরু করেছে। বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু, ছাগলসহ অন্যান্য পশু নিয়ে আসা হচ্ছে ওই হাটে।

ওই হাটে ওঠা একটি গরু সবার দৃষ্টি কেড়েছে। ২৭ মণ ওজনের গরুটির নাম রাখা হয়েছে ‘বাগেরহাটের শান্ত’। বিক্রেতা দাম হাঁকাচ্ছেন ১০ লাখ টাকা। গতকাল রোববার দুপুরে বাগেরহাট থেকে গরুটি ওই হাটে নিয়ে আসেন মো. আবদুল নকিব। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে গরুর সঙ্গে একটি খাসি বিনা মূল্যে দেওয়ার কথা বলছেন বিক্রেতা। ইতিমধ্যে গরুটির দাম ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত উঠেছে বলে জানান নকিব।

নকিব বলেন, শাহিওয়াল জাতের এই গরু ৪ বছর আগে ৮৯ হাজার টাকায় কিনে লালন-পালন করেছেন তিনি। বর্তমানে গরুটির বয়স সাড়ে ৪ বছরের মতো। গরুটিকে গত বছরও হাটে আনা হয়েছিল। তখন দাম হাঁকা হয় ৫ লাখ টাকা। সাড়ে চার লাখ টাকা পর্যন্ত দাম ওঠে। এবার দাম চাওয়া হচ্ছে ১০ লাখ টাকা। কেউ গরু কিনলে খাসিটি বিনা মূল্যে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

ওই গরুর পাশেই রয়েছে আরেকটি বেশ বড় গরু। প্রায় ২০ মণ ওজনের ওই গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে ৮ লাখ টাকা। সেটি ওই হাটে তুলেছেন আবদুল মান্নান। নকিব ও মান্নানের বাড়ি একই এলাকায়।

আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওই পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, ওই দুটি গরু ঘিরেই মানুষের ভিড় বেশি। তবে ক্রেতা নেই। অনেকেই এসে দরদাম করে চলে যাচ্ছেন। বড় গরুর সংখ্যা তুলনামূলক কম, বেশি উঠেছে মাঝারি আকারের গরু। বিক্রেতারাও বলছেন, এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা দামের গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি।

খুলনা নগরের একমাত্র কোরবানির পশুর হাট এটি। প্রতিবছর সপ্তাহব্যাপী ওই হাটের আয়োজন করা হয়। পরিচালনা করে খুলনা সিটি করপোরেশন। এ বছর হাট বসেছে ২২ জুন থেকে, চলবে ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত। প্রতিদিন খুলনাসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে ওই হাটে কোরবানির পশু বিক্রির জন্য নিয়ে আসছেন বিক্রেতারা। এবার জোড়াগেট মোড় থেকে ৬ নম্বর ঘাট পর্যন্ত হাটের সীমানা নির্ধারণ করা হয়। গত বছর ওই হাট থেকে ২ কোটি ২৫ লাখ ৬০ হাজার টাকার রাজস্ব আদায় করেছিল সিটি করপোরেশন।

দাম বেশির অভিযোগ
গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন ওই হাটে গরু কিনতে আসা ক্রেতারা। তাঁদের অভিযোগ, বিক্রেতারা গরুর দাম অনেক বেশি চাইছেন।  

মাঝারি আকারের একটি গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছিলেন নগরের শেখপাড়ার আলম চৌধুরী। গরুর দাম পড়েছে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, গত বছর একই ধরনের গরু কিনেছিলেন এক লাখের কম টাকা দিয়ে। এবার সে তুলনায় দাম অনেক বেশি পড়ে গেছে।

ওই হাটে বিক্রির জন্য ৫টি গরু নিয়ে এসেছেন মো. সায়েম সরদার। ৪ লাখ ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত গরু রয়েছে তাঁর কাছে। তিনি বলেন, গরুর দাম আগের তুলনায় এবার অনেকটা বেশি।

ট্রাক ও ট্রলার ভরে আসছে গরু
২২ জুন ওই পশুর হাটের উদ্বোধন করা হলেও এত দিন খুব বেশি পশু ছিল না। বিক্রিও হয়েছে খুবই কম। তবে কাল দুপুর থেকে আসতে শুরু করেছে গরু-ছাগলসহ অন্যান্য পশু। বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাক ও ট্রলার ভরে পশু নিয়ে আসছেন বিক্রেতারা। হাটে ওঠা পশুর মধ্যে গরুর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।

ওই হাটের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে জানা গেছে, আজ বেলা আড়াইটা পর্যন্ত মাত্র ১৪৬টি পশু বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে গরু রয়েছে ৮৩টি। পশু বিক্রি থেকে এ পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪ লাখ ৬২ হাজার টাকা।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ঈদ যত এগিয়ে আসবে, হাটে পশুর সংখ্যা তত বাড়বে। এখন যেমন বিক্রেতারা অলস সময় কাটাচ্ছেন, তখন তাঁরা দম ফেলারও ফুরসত পাবেন না।
ভৈরব নদের ৬ নম্বর ঘাট এলাকায় নদীপথে আসা পশুর ঘাট করা হয়েছে। ওই ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু নিয়ে ট্রলার ভিড়ছেন সেখানে। হাটে আজ বেলা ১টা পর্যন্ত গরু এসেছে ৬৮০টি।

নড়াইল থেকে ট্রলারে করে নিয়ে আসা গরু ঘাটে নামাচ্ছিলেন সেকেন্দার শেখ। এবার দুটি গরু নিয়ে এসেছেন তিনি। তিনি বলেন, চার বছর ধরে এভাবে গরু নিয়ে খুলনার হাটে তুলছেন। কোনোবার লোকসান হয়নি। এবারও গরু নিয়ে এসেছেন। আশা করছেন ভালো দাম পাবেন।

খুলনা সিটি করপোরেশনের বৈষয়িক কর্মকর্তা (স্টেট অফিসার) মো. নুরুজ্জামানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ওই হাটের সুপারভাইজারের। তিনি বলেন, মূল কেনাবেচা হয় ঈদের দুই দিন আগে থেকে ঈদের সকাল পর্যন্ত। এর মধ্যে ঈদের আগের দিন প্রায় সারা রাত ধরেই গরু কেনাবেচা হয়। এখন বিভিন্ন এলাকা থেকে পশু আসতে শুরু করেছে। প্রতিবছর হাট থেকে রাজস্ব আদায় বাড়ছে। এবারও সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় হবে বলে মনে করেন তিনি।

নুরুজ্জামান আরও বলেন, ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জাল নোট শনাক্তে রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। ব্যাংকের শাখাও খোলা হয়েছে হাটে।