
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার মনতলা গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম (৩৫)। পেটের তাগিদে রিকশা চালান। আর মনের খোরাক জোগাতে নান্দনিক সব কারুপণ্য বানান। বাঁশ ও নারকেলের মালা দিয়ে তৈরি করেন নান্দনিক সব কারুপণ্য। শখের বশে শুরু করলেও এখন এসব বিক্রি করেন। তিনি স্বপ্ন দেখেন, নিজের এসব কারুপণ্য বিদেশে বিক্রির।
স্ত্রী জান্নাত আক্তার, ৯ ও দুই বছর বয়সী দুই মেয়ে নিয়ে জাহাঙ্গীরের সংসার। ২০০৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর নানা পেশা পাল্টে এখন রিকশা চালান জাহাঙ্গীর। ময়মনসিংহ নগরে এক দিন পরপর রিকশা চালান। যেদিন বাড়িতে থাকেন, সেদিন কারুপণ্য তৈরি করেন।
সম্প্রতি নগরের কাছারিঘাটে চলা বাণিজ্য মেলায় ঢুকে দেখা যায়, একটি টেবিলে বাঁশ ও নারকেলের মালা দিয়ে তৈরি কারুপণ্য সাজিয়ে বসে আছেন জান্নাত আক্তার। রাস্তা দিয়ে চলা মানুষ এসে দাঁড়াচ্ছেন, আর কারুপণ্য দেখছেন। অনেকে দরদাম করছেন, কেউ কেউ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
হৃদয় মাহমুদ নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘নারকেলের খোসাকে আমরা আরছি বলি। এগুলো ফেলে দেওয়া ছাড়া কোনো কাজ নেই। কিন্তু এই আরছি দিয়ে ফুল, গাছ, টব কত–কী তৈরি করা হয়েছে। সত্যি মুগ্ধ হওয়ার মতো!’
সম্প্রতি মনতলা গ্রামে জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনে রোদে শুকাচ্ছেন নারকেলের মালা। উঠানে নিজের তৈরি পণ্য রোদে দিয়ে সেগুলো পরিষ্কার করছিলেন। বাঁশের তৈরি কলমদানি, ব্রাশহোল্ডার, ফুলের টব, ওয়ালমেট, দেয়ালঘড়ি, কাপ, ল্যাম্প, চামচসহ কত–কী আছে সেখানে!
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাড়িতে অলস বসে থাকার চেয়ে কিছু একটা করার চিন্তা থেকে কারুপণ্য তৈরি শুরু করেন। সেগুলো দেখে আশপাশের মানুষ ভালো বলতে থাকেন। তিনিও উৎসাহ পান। ইন্টারনেট ঘেঁটে নানা কলাকৌশল রপ্ত করেন। এরপর আটঘাট বেঁধে লাগেন, জিনিস বানানো শুরু করেন। এ জন্য প্রথমে নারকেলের মালা ও বাঁশে ওষুধ দিয়ে রেখে দেন, যেন ঘুণে না ধরে। এরপর পণ্য বানিয়ে সেগুলোয় বার্নিশ করেন। তিনি জানান, ২৫ থেকে ৩০ ধরনের পণ্য বানান। স্থানীয় বাজারে এই পণ্যের তেমন দাম পান না। তাই এসব পণ্য অনলাইনে বিক্রির চিন্তা করছেন। সুযোগ হলে দেশের বাইরেও রপ্তানি করতে চান। সে জন্য গড়তে চান একটি কারখানা।
স্বামীকে সহযোগিতা করেন বলে জানান জাহাঙ্গীরের স্ত্রী জান্নাত। তিনি বলেন, স্বামী অনেক শখ করে কাজটি করেন। এসব কারুপণ্য নিয়ে আরও বহুদূর যাওয়ার স্বপ্ন তাঁদের।