বিরোধ মীমাংসা না করেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা

বিএনপি
বিএনপি

নেতা-কর্মীদের বিরোধ দূর না করেই প্রায় ১৫ মাস পর জেলা বিএনপির ৩২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গত শনিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিএনপির ফেসবুক পেজে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ ঢাকা মহানগর উত্তর, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট মহানগর ও বিভিন্ন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।

এর আগে ২০২৩ সালের ১০ আগস্ট জেলা বিএনপির পাঁচ সদস্যের আংশিক আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। ওই পাঁচ সদস্যের কমিটি এরপর দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগের পাঁচ সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবকে নতুন আহ্বায়ক কমিটিতে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। নতুন কমিটিতে জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি আবদুল মান্নানকে আহ্বায়ক এবং জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলামকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় বিএনপির অর্থনীতিবিষয়ক সম্পাদক ও সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসন থেকে একাধিকবার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে অংশ নেওয়া খালেদ হোসেন মাহবুব ওরফে শ্যামলকে ১ নম্বর সদস্য করা হয়েছে। আগের কমিটির ২, ৩ ও ৪ নম্বর সদস্য জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র হাফিজুর রহমান মোল্লা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক ও নূরে আলম সিদ্দিকীকে নতুন কমিটিতে ৩, ৪ ও ৫ নম্বর সদস্য করা হয়েছে।

অন্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম খান, বেলাল উদ্দিন সরকার, জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক সাবেক ভিপি আবু শামীম মো. আরিফ, মো. আসাদুজ্জামান শাহীন, আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ কে এম কামরুজ্জামান মামুন, মো. কাউসার, মো. আজিম প্রমুখ। কমিটিতে কবির আহমেদ ভূঁইয়াকে ৩২ নম্বর সদস্য করা হয়েছে। কবির আহমেদ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রহমান ওরফে সানির আপন বড় ভাই এবং আখাউড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসাংস্কৃতিক সম্পাদক। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে দলীয় প্রার্থী হতে চান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির কয়েকজন নেতা বলেন, ৩২ সদস্যের নতুন কমিটিতে স্থান পাওয়া ২৬ নেতাই কবির আহমেদ ভূঁইয়ার অনুসারী। বাকি চারজন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে একাধিকবার প্রার্থী হওয়া খালেদ হোসেনের অনুসারী। খালেদ হোসেনের অনুসারীদের কমিটিতে না রাখায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। অপর দিকে সদরের নেতারা স্থান পেলেও কমিটিতে বিজয়নগর উপজেলার কেউই স্থান পাননি। আহ্বায়কের পদ পাওয়া আবদুল মান্নানকে নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানান, গত বছর আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর ২০২৩ সালের ১১ আগস্ট বিকেলে শহরের নিউ মৌড়াইল এলাকায় সভা করে জেলা বিএনপির ঘোষিত পাঁচ সদস্যের আংশিক আহ্বায়ক কমিটিকে ‘বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য’ উল্লেখ করে সাত দিনের মধ্যে বিলুপ্ত ঘোষণার দাবি জানান বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। ওই সভায় ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লার সভাপতিত্বে সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক সভা সঞ্চালনা করেন। ওই সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির নেতা নিয়াজ আহমেদ, সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আজম, জেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক মনির হোসেন, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হাফিজ উদ্দিন, সহসভাপতি আজহার হোসাইন চৌধুরী প্রমুখ। সে সময় কবির আহমেদ ভূঁইয়াকে অগ্রহণযোগ্য আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার মূল হোতা ও পৃষ্ঠপোষক উল্লেখ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির রাজনীতিতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।

বক্তারা আরও বলেন, পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি দুই ভাগে বিভক্ত। হাফিজুর রহমান মোল্লা ও জহিরুল হকের নেতৃত্বে রয়েছে বিএনপিসহ অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের একটি বড় অংশ। অপর দিকে আবদুল মান্নান, সিরাজুল ইসলাম ও নূরে আলম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে বিএনপির আরেক অংশ রয়েছে। কমিটি ঘোষণার পর দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কমিটি ঘোষণার পর থেকে দুই পক্ষই পৃথকভাবে দলীয় সব কর্মসূচি পালন করে আসছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চার বছর ধরে আহ্বায়ক কমিটির বেড়াজালে আটকে আছে জেলা বিএনপির রাজনীতি। ২০২০ সালের ১৩ নভেম্বর জিল্লুর রহমানকে আহ্বায়ক করে জেলা বিএনপির ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু আড়াই বছরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি আহ্বায়ক কমিটি। ২০২৩ সালের ২৯ মে জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর আবার পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এবার আবার ৩২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি করা হলো।

এসব ব্যাপারে বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও কল না ধরায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হাফিজুর রহমান ও জহিরুল হকের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

তবে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল মান্নান প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, বিরোধ মীমাংসা করেই নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে দল সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী হবে।