
কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী আবদুল কাহার আকন্দের মতবিনিময় সভার মঞ্চ ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল শুক্রবার বিকেল চারটায় কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের মাইজহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ওই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর আগেই বেলা সাড়ে তিনটার দিকে হামলা চালিয়ে সভার মঞ্চ ভাঙচুর করার অভিযোগ ওঠে। এ সময় পুলিশ সেখানে উপস্থিত ছিল। কিন্তু তারা এগিয়ে আসেনি।
কিশোরগঞ্জ-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদের অনুসারীরা এ হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে দাবি করেছেন আবদুল কাহার আকন্দ। এ পরিস্থিতিতে আজ শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে সভামঞ্চ ভাঙচুরের প্রতিবাদ এবং শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ আয়োজনের নিশ্চয়তা চেয়েছেন তিনি।
আবদুল কাহার আকন্দ পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি)। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, জেলহত্যা মামলা, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলা, বিডিআর বিদ্রোহ মামলাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন তিনি।
কিশোরগঞ্জ শহরের গৌরাঙ্গবাজার এলাকায় একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল কার্যালয়ে আবদুল কাহার আকন্দ সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে আমি পথ চলছি। কিন্তু কটিয়াদী-পাকুন্দিয়ায় আওয়ামী লীগ যেন নিজ দেশে পরবাসী। এখানে বিএনপিসহ অন্য দলগুলো নির্বিঘ্ন কর্মসূচি পালন করতে পারলেও একমাত্র সংসদ সদস্য ছাড়া আওয়ামী লীগের অন্য কেউ সভা-সমাবেশ করতে পারেন না। সরকারের উন্নয়নের বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমি শান্তিপূর্ণভাবে সভা-সমাবেশ করার নিশ্চয়তা চাই। আওয়ামী লীগের অন্য সবাই যেন শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতে পারেন, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।’
আবদুল কাহার আকন্দ পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি)। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, জেলহত্যা মামলা, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলা, বিডিআর বিদ্রোহ মামলাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন তিনি।
আবদুল কাহার আকন্দ বলেন, আওয়ামী লীগের একজন মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে ২০১৯ সালে পুলিশের চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর চার বছর ধরে তিনি গণসংযোগ ও প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। এখন পর্যন্ত তিনি শতাধিক গণসংযোগ ও সমাবেশ করেছেন। সব কটি সমাবেশ ও গণসংযোগ শান্তিপূর্ণভাবে করেছেন। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল বিকেলে পাকুন্দিয়া উপজেলার চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের ষাইটকাহন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সরকারের উন্নয়নমূলক প্রচারণার বিষয়ে তিনি মতবিনিময় সভা আহ্বান করেছিলেন। কিন্তু একই স্থানে একই সময়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ সমাবেশ ঘোষণা করলে তিনি বিষয়টি নিয়ে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার ও পাকুন্দিয়া থানার ওসির সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের পরামর্শে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে তিনি ভেন্যু পরিবর্তন করে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের মাইজহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সমাবেশের প্রস্তুতি নেন। গতকাল বিকেল চারটায় সমাবেশ শুরু হওয়ার আগে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সংসদ সদস্যের অনুসারী ২০-৩০ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে সেখানে হামলা চালায় এবং সভামঞ্চ ভাঙচুর করে। পরে তিনি সেখানে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন এবং তাঁর সমর্থকেরা সড়কে মিছিল করেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাহার আকন্দ বলেন, ‘আজ বিকেলে কটিয়াদীর মুমুরদিয়া এলাকায় আমার একটি সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। সেটারও অনুমোদন দেয়নি পুলিশ। সে জন্য আমি সভা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছি। আমি পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও আমার ওপর এ অন্যায়, তাহলে এখানে অন্যদের কী অবস্থা, তা পরিস্থিতি দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এখানে একনায়কতন্ত্রের একটা অরাজকতা চলছে। মনে হচ্ছে আমরা ভেসে আসছি। উনি (বর্তমান সংসদ সদস্য) সব করেছেন।’
আবদুল কাহার আকন্দ বলেন, তিনি শুনেছেন, সংসদ সদস্যের সমর্থকেরা তাঁর ওপর হামলা করার হুমকি দিয়েছেন। তাই যেকোনো সময় তাঁর ওপর হামলা হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। এ পরিস্থিতিতে তিনি শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ আয়োজনের নিশ্চয়তা চান। এ ছাড়া সভামঞ্চ ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িতদের তিনি বিচার দাবি করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি আইনি পদক্ষেপ নেবেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে কটিয়াদী উপজেলার সহশ্রাম-ধূলদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কাসেম আকন্দ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মো. লুৎফুর রহমান, কটিয়াদী উপজেলা যুবলীগ নেতা মো. দিদার আকন্দ এবং ব্যবসায়ী মো. মাইন উদ্দিন, আল আমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পাকুন্দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাহিদ হাসান বলেন, ‘মঞ্চ ভাঙচুরের ঘটনা আমাদের চোখে পড়েনি। পুলিশ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট ছিল। এরপরও যদি পুলিশের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করেন, তাতে আমাদের করার কিছু নাই।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি তা ধরেননি।