ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির যাঁরা দেশের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, তাঁদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসার দাবি করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন।
আজ শনিবার দুপুরে রংপুর নগরের পার্কের মোড়ে শহীদ আবু সাঈদ চত্বরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ দাবি করেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী হিসেবে আখতার হোসেন যোগ দেওয়ার পর গতকাল রংপুরে এলে শহীদ আবু সাঈদ চত্বরে তাঁকে সংবর্ধনা দেন এনসিপি ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতা-কর্মীরা।
এনসিপির নেতা আখতার হোসেন বলেন, ‘দেশে দীর্ঘ সময় ধরে যে ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়েছিল, ফ্যাসিবাদ কায়েমের পেছনে গুমের মতো ঘৃণ্য ঘটনা দেখেছি। দেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ যাঁরা বিভিন্ন সময় সরকারের সমালোচনা করতেন, তাঁদের গুম ও খুন করা হতো, আয়নাঘরে নিয়ে গিয়ে তাঁদের নির্যাতন করা হতো। এই গুম ও খুনের সঙ্গে যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁরা দেশের মানুষের পক্ষে কাজ করেননি। তাঁরা দেশের মানুষের গণতন্ত্র হরণ করা আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য সফল করতে কাজ করেছিলেন। এই গুম ও খুনের সঙ্গে সেনাবাহিনী ও ডিজিএফআইসহ র্যাব ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অনেক সিনিয়র (জ্যেষ্ঠ) কর্মকর্তারা যুক্ত ছিলেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। যেসব জেনারেল, ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তা, র্যাবের কর্মকর্তা, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা দেশের মানুষকে গুম, খুন ও আয়নাঘরে বন্দী করেছেন, আমরা এনসিপির পক্ষ থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানাই।’
দেশের আইনশৃঙখলা রক্ষাকারী বাহিনী জনগণের পক্ষে ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানিয়ে আখতার হোসেন বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তাকে রক্ষার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের অংশ, বাংলাদেশের জনগণের অংশ। এই প্রতিষ্ঠানকে যাঁরা কালিমা লেপনের চেষ্টা করেছেন, এই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে থেকে যাঁরা হাসিনার হুমুককে তামিল করে গুম করেছেন, খুন করেছেন, তাঁরা দেশের শত্রু, তাঁরা মানুষের শত্রু। তাঁদের সঙ্গে কোনো আপসের জায়গা নেই। কিন্তু বাহিনী হিসেবে সেনাবাহিনীর অনেক সদস্য অভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, আমরা তাঁদের সাধুবাদ জানাই।’
দেশের মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে তাঁদের ভোটাধিকারের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে বলে উল্লেখ করেন আখতার হোসেন। তিনি বলেন, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪-এর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের ভোটাধিকারকে হরণ করা হয়েছে। ডামি, রাতের ভোট ও একপক্ষীয় নির্বাচনের আয়োজন করে দেশের মানুষের ভোটাধিকার নষ্ট করা হয়েছে। দেশের মানুষের কাছে সুযোগ এসেছে, একটি অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশের শাসনক্ষমতা পরিচালনা করার।
আখতার বলেন, ‘অন্তর্বতীকালীন সরকার সামনে যে নির্বাচনে সময়সীমা ঘোষণা করেছে; আমরা মনে করি, যদি এর মধ্যে জুলাই সনদের বিষয়টি ফয়সালা করা হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করে মাঠপ্রশাসন নিরপেক্ষ করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা সম্ভব হয়, তাহলে দেশে অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব।’
এর আগে আখতার হোসেন নগরের নূরপুরে জেলা বিএনপির প্রয়াত সদস্যসচিব আনিছুর রহমানের কবর জিয়ারত করেন ও তাঁর বাড়িতে গিয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সমবেদনা জানান। বিকেলে নন্দীগঞ্জ বাজারে গণসংবর্ধনা ও পথসভায় অংশ নেওয়ার কথা তাঁর। আখতার হোসেন রংপুর-৪ (পীরগাছা-কাউনিয়া) আসনে আসছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন বলে এলাকায় আলোচনা আছে।