
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালীর ঢালায় মাইক্রোবাসের সঙ্গে যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত পাঁচজনের পরিচয় মিলেছে। তাঁরা কুমিল্লা থেকে কক্সবাজার সমুদ্র দেখতে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামের বাতিসা এলাকার এনামুল হকের স্ত্রী রুমেনা বেগম (৬০), তাঁর মেয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ শিক্ষার্থী সাদিয়া হক (২৪), রুমেনার ছেলে আমিনুল হকের স্ত্রী ফারজানা মজুমদার লিজা (২৫), ফারজানার মা রিজওয়ানা ইসলাম (৫০) ও ফারজানার বোন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্রী ফারহানা মজুমদার (২৪)। আহত ব্যক্তিরা হলেন এনামুল হক, তাঁর ছেলে আমিনুল হক ও তাঁর শিশুসন্তান সাদমান (৬)।
নিহত ব্যক্তিদের স্বজন চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা এলাকার বাসিন্দা জান্নাতুল ফেরদৌস (৩৮) বলেন, আজ বুধবার ভোরে আমিনুল হক তাঁর স্ত্রী-সন্তান, মা-বাবা–বোন, শাশুড়ি ও শ্যালিকাকে নিয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। আমিনুল হক নিজেই ব্যক্তিগত মাইক্রোবাসটি চালাচ্ছিলেন। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালীর ঢালা এলাকায় পৌঁছালে চট্টগ্রামমুখী মারছা পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে আমিনুল হকের মা, বোন, স্ত্রী, শাশুড়ি ও শ্যালিকা মারা যান। আমিনুল, তাঁর বাবা ও তাঁর শিশু সন্তান গুরুতর আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘হতাহতেরা কক্সবাজার থেকে কুমিল্লা ফেরার পথে চকরিয়ার ডুলাহাজারা এলাকায় আমাদের বাড়িতে আসার কথা ছিল। কিন্তু পথে সব শেষ হয়ে গেছে। দেখা হলো না সমুদ্র, আসা হলো না আমাদের বাড়িতে।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, মারসা পরিবহনের বাসটির সামনের কাচ (উইন্ডশিল্ড) পুরোটাই ভেঙে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাসের ওই অংশ। আর বাসের সঙ্গে সংঘর্ষ হওয়া মাইক্রোবাসটি পুরোপুরি দুমড়েমুচড়ে গেছে। ভেঙে খুলে এসেছে গাড়ির দরজা।
মালুমঘাট হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, নিহত পাঁচজনের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন নিহত রুমানা আকতারের ছেলে মুনীরুল হক। লাশগুলো বর্তমানে মালুমঘাট হাইওয়ে থানায় রয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দুটি জব্দ করা হয়েছে।
একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যুতে চৌদ্দগ্রামের গ্রামের বাড়িতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। চান্দিশকরা গ্রামের লোকজন ও আমিনুল হকের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিবার ও স্বজনদের নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠার জন্য গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর উত্তরার বাসা থেকে মাইক্রোবাসে করে কক্সবাজারে রওনা হন আমিনুল হক। ঢাকা থেকে সঙ্গে নেন মা রুমেনা বেগম ও বোন সাদিয়া হককে। চৌদ্দগ্রাম পৌর এলাকার ফাল্গুনকরার শ্বশুরবাড়ি থেকে ভোর সাড়ে তিনটার দিকে সঙ্গী হন আমিনুলের স্ত্রী ফারজানা মজুমদার, চার বছরের ছেলে সাদমান, শাশুড়ি রিজওয়ানা মজুমদার, শ্যালিকা ফারহানা মজুমদার ও শ্যালক শাহেদ মজুমদার। আজ সকাল ৯টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালীর ঢালা এলাকায় তাঁদের মাইক্রোবাসের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি যাত্রীবাহী বাসের সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হন।
আমিনুলের শ্বশুর আবদুল মান্নান মজুমদার বলেন, ‘আমার মেয়ে ফারজানা মজুমদার গত কয়েক দিন আগে বেড়াতে আসে। দীর্ঘদিন ধরে কর্মব্যস্ততার কারণে স্বজনদের সঙ্গে আমিনুলের দেখা হচ্ছিল না, কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়নি। কয়েক দিন আগে আমিনুল পরিকল্পনা করে কক্সবাজারে আনন্দ ভ্রমণ করতে যাবে সবাইকে নিয়ে। মঙ্গলবার রাতে ঢাকার উত্তরা থেকে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বুধবার ভোরে আমাদের বাড়ি থেকে তাঁর স্ত্রী-সন্তানসহ আমার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েকে নিয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা করেন। পথিমধ্যে চকরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় দুটি পরিবারই শেষ হয়ে গেছে। আমার নাতিটার অবস্থাও বেশি ভালো না। এখন আমি কী নিয়ে বাঁচব। কীভাবে এত লাশের ভার বইব?’