আট কেজি ওজনের এই কাতল মাছটি শিকার করে শৌখিন মাছ শিকারি ইলিয়াস মিয়া পুরস্কার পেয়েছেন ৩ লাখ টাকা। শুক্রবার সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ কলেজ দিঘি থেকে তোলা ছবি
আট কেজি ওজনের এই কাতল মাছটি শিকার করে শৌখিন মাছ শিকারি ইলিয়াস মিয়া পুরস্কার পেয়েছেন ৩ লাখ টাকা। শুক্রবার সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ কলেজ দিঘি থেকে তোলা ছবি

৮ কেজি ওজনের কাতলা ধরে পেলেন ৩ লাখ টাকার পুরস্কার

শুক্রবার সকাল ছয়টায় ২৮ হাজার টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে বড়শি দিয়ে মৎস্যশিকার প্রতিযোগিতায় অংশ নেন কিশোরগঞ্জের ইলিয়াছ মিয়া (৪৫)। বেলা দেড়টার দিকে তাঁর বড়শিতে ধরা পড়ে ৮ কেজি ৪০ গ্রাম ওজনের একটি কাতলা মাছ। সেটি ছিল প্রতিযোগিতায় ধরা পড়া সবচেয়ে বড় মাছ। মাছটি শিকার করে পুরস্কার হিসেবে তিনি জিতে নিয়েছেন ৩ লাখ টাকার পুরস্কার।

উপজেলার কালীকচ্ছ ইউনিয়নের কলেজপাড়ার কলেজ দিঘিতে শুক্রবার দিনভর বড়শি (ছিপ) দিয়ে মৎস্যশিকার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সরাইল সরকারি কলেজ পুকুর মৎস্যচাষ সমিতি নামের একটি সংগঠন এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।

সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ প্রতিযোগিতায় ৩৫টি মাচায় ৭০ জন শৌখিন মৎস্যশিকারি অংশ নেন। তাঁদের আসন নির্ধারণ করা হয় লটারির মাধ্যমে। শিকারিরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলার বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও এসেছেন ঢাকা, নরসিংদী, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর ও হবিগঞ্জ জেলা থেকে। প্রত্যেককে আসনপ্রতি দিতে হয়েছে ২৮ হাজার টাকা।

দিনভর দেখা গেছে বড়শি দিয়ে মাছ শিকারের দৃশ্য। কেউ মাছের খাবার প্রস্তুত করেছেন, কেউ দিঘিতে বড়শি ফেলেছেন। হঠাৎ হঠাৎ মাচা থেকে জোরেশোরে আওয়াজ উঠছে। ‘বড় মাছ’, ‘বড় মাছ’ বলে হইহুল্লোড় করছেন শিকারি ও তাঁদের লোকজন। প্রতিটি আসনে মাছ ধরতে টিকিট ছাড়া আনুষঙ্গিক আরও ১০-১২ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। আসনের মালিকদের অনেকে ভাড়া করে শিকারি নিয়ে এসেছিলেন। ভাড়াটে শিকারিকে দিতে হয়েছে ৩ হাজার টাকা করে। আর পুরস্কার পেলে ভাড়াটে শিকারিকে দিতে হয় পুরস্কারের ১০ শতাংশ টাকা।

আট কেজি ওজনের কাতল মাছ শিকার করে শৌখিন মাছ শিকারি ইলিয়াস মিয়া পুরস্কার পেয়েছেন তিন লাখ টাকা। আয়োজকদের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায়

প্রতিযোগীদের জন্য ছিল ৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকার সাতটি পুরস্কার। কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার ইলিয়াস মিয়া ৮ কেজি ৪০ ওজনের কাতলা মাছ শিকার করে প্রথম পুরস্কার হিসেবে পান ৩ লাখ টাকা। ইলিয়াস মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন জায়গায় মৎস্য শিকার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে থাকি। আজ প্রথম পুরস্কার পেয়ে ভালোই লাগছে।’

সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ ইউনিয়নের কলেজপাড়ার আবু শামীম মোহাম্মদ জাবেদ ৬ কেজি ৩২০ গ্রাম ওজনের কাতলা শিকার করে দ্বিতীয় হন। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। একই উপজেলা সদরের উচালিয়পাড়া গ্রামের আবদুল কাদির ৫ কেজি ৮৬০ গ্রাম ওজনের কাতলা শিকার করে তৃতীয় হয়ে পুরস্কার পেয়েছেন ৭৫ হাজার টাকা।

এ ছাড়া হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার মনতলা এলাকার আজগর ভান্ডারি ৫ কেজি ৪৪০ গ্রাম ওজনের কাতলা শিকার করে চতুর্থ পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন ৫০ হাজার টাকা। সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ ইউনিয়নের সূর্যকান্দি গ্রামের আবদুর রাকিব ৫ কেজি ২৬০ গ্রাম ওজনের কাতলা ধরে পঞ্চম হন। তিনি পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন ৪৫ হাজার টাকা। উপজেলা সদরের কাচারিপাড়া এলাকার সেলিম মিয়ার বড়শিতে ধরা পড়ে ৫ কেজি ৬০ গ্রাম ওজনের কাতলা। তিনি ষষ্ঠ পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন ৪০ হাজার টাকা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মেড্ডা এলাকার জামাল হোসেন ৪ কেজি ৬০ গ্রাম ওজনের কাতলা শিকার করে সপ্তম পুরস্কার পেয়েছেন ৩০ হাজার টাকা।

দিঘিটির মালিক সরাইল সরকারি কলেজ ও কালীকচ্ছ পাঠশালা উচ্চবিদ্যালয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুটি থেকে তিন বছরের জন্য ১৭ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছেন হাবিবুর রহমানসহ ছয়জন। তাঁরা প্রতিবছর কয়েকবার মৎস্য শিকার প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকেন। মৎস্যশিকার প্রতিযোগিতা দেখতে দিঘির চার দিকে দর্শকের সমাগম ঘটে।

হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবছর এ দিঘিতে পাঁচ-ছয়বার এ রকম প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এটি এ বছরের তৃতীয় আয়োজন। এতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শৌখিন মৎস্যশিকারিরা অংশ নিয়ে থাকেন। এটি উপজেলার শত বছরের ঐতিহ্য।’