দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত তিনটি ডাইভিং বোট পানকৌড়ি, গাংচিল ও মাছরাঙ্গা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে খুলনা নেভাল বার্থে
দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত তিনটি ডাইভিং বোট পানকৌড়ি, গাংচিল ও মাছরাঙ্গা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে খুলনা নেভাল বার্থে

দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি নৌবাহিনীর ৩ ডুবুরি জাহাজ পানকৌড়ি, গাংচিল ও মাছরাঙ্গার কমিশনিং

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর আধুনিকায়ন ও ত্রিমাত্রিক সক্ষমতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে দেশীয় প্রযুক্তিতে নবনির্মিত তিনটি ডাইভিং বোট (ডুবুরিদের সহায়তাকারী জাহাজ) পানকৌড়ি, গাংচিল ও মাছরাঙ্গার কমিশনিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে খুলনা নেভাল বার্থে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান।

অনুষ্ঠানে নৌপ্রধান নতুন কমিশনিং হওয়া বোটসমূহের অধিনায়কদের কাছে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন এবং নৌবাহিনীর রীতি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে নামফলক উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানে খুলনা নৌ অঞ্চলের কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল গোলাম সাদেকসহ সামরিক ও বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, জাহাজের কর্মকর্তা, নাবিক এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে নৌবাহিনীর প্রধান নাজমুল হাসান বলেন, প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সর্বোপরি ভূরাজনৈতিক প্রয়োজনে একটি শক্তিশালী নৌবাহিনীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিশাল সমুদ্র অঞ্চলের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে যুদ্ধ ও শান্তিকালীন বিভিন্ন কর্মকাণ্ড এবং উদ্ধার অভিযানে বাংলাদেশ নৌবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনতা লাভের পর একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী গঠনের লক্ষ্যে অল্প কিছু অকুতোভয় নৌ সদস্যকে নিয়ে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ নৌবাহিনী আজ একটি পূর্ণাঙ্গ ও ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনীতে পরিণত হয়েছে।

ডুবুরি জাহাজ পানকৌড়ি, গাংচিল ও মাছরাঙ্গার কমিশনিং করেন নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান। আজ বৃহস্পতিবার সকালে খুলনা নেভাল বার্থে

নৌবাহিনীপ্রধান বলেন, বিশাল সমুদ্র এলাকার সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং ব্লু-ইকোনমি–সংক্রান্ত কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে নৌবাহিনীর কর্মপরিধি ও দায়িত্ব বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু তা–ই নয়, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে নৌবাহিনী আজ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে চলেছে। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মিত তিনটি ডুবুরি জাহাজ নৌবাহিনীতে কমিশনিং করতে পেরে তিনি আনন্দিত।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০২১ সালের ১০ জুন খুলনা শিপইয়ার্ডে কিল লেয়িংয়ের (নির্মাণকাজের উদ্বোধন) মাধ্যমে দেশীয় প্রযুক্তিতে তিনটি ডাইভিং বোটের নির্মাণকাজ শুরু হয়। নির্মাণকাজ ও প্রয়োজনীয় টেস্ট ট্রায়াল শেষে গত ৬ মে ডাইভিং বোটগুলো বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। নৌবাহিনীতে নবসংযোজিত ডাইভিং বোটগুলোর প্রতিটির দৈর্ঘ্য ৩৮ দশমিক ৯০ মিটার, প্রস্থ ৯ মিটার। বোটগুলো ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৫ নটিক্যাল মাইল বেগে চলতে সক্ষম। ডুবুরি কার্যক্রমের আধুনিকায়নে বোট তিনটিতে সংযুক্ত করা হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি।

ডাইভিং কার্যক্রমে ব্যবহৃত আধুনিক সরঞ্জাম ও সেন্সরে সুসজ্জিত এই বোটগুলোর মাধ্যমে নৌবাহিনীর ডুবুরিরা আরও কার্যকর ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্বপালনে সক্ষম হবে। এ ছাড়া প্রতিটি বোটে রয়েছে ১২ দশমিক ৭ মিমি হেভি মেশিন গান, উন্নত সার্ভেল্যান্স রাডার, জিপিএস, ইকো-সাউন্ডার এবং আধুনিক কন্ট্রোল সিস্টেম। বোটগুলো শান্তিকালীন সামুদ্রিক নিরাপত্তা প্রদানসহ ডাইভিং অপারেশন, উদ্ধার অভিযান পরিচালনা, স্যালভেজ অপারেশন, দুর্যোগ ও ত্রাণ তৎপরতায় অংশগ্রহণ, সমুদ্র এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ বিভিন্ন দায়িত্বপালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।