
রাজশাহীর মোহনপুরে অবৈধভাবে পুকুর খননে বাধা দেওয়ায় এক্সকাভেটরের নিচে ফেলে কৃষক আহমেদ জোবায়েরকে হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে ‘মোহনপুর উপজেলা নাগরিক কল্যাণ কমিটি’র ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
সকাল থেকে মোহনপুর উপজেলা চত্বরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বিক্ষোভ-মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। মিছিলটি উপজেলা চত্বর প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের সামনে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, নিহত কৃষক জোবায়েরের হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত নৃশংস ও মানবতাবিরোধী ঘটনা। দ্রুত দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না করা হলে জনমনে ক্ষোভ আরও বাড়বে। এ জন্য বক্তারা প্রশাসনের প্রতি অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
পরে দুপুর ১২টার দিকে মোহনপুর উপজেলা নাগরিক কল্যাণ কমিটির পক্ষ থেকে ইউএনওর নিকট একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এ সময় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতা এবং সাধারণ জনগণ উপস্থিত ছিলেন।
স্মারকলিপিতে ১২১ জন কৃষক স্বাক্ষর করেছেন। এতে বলা হয়েছে, কৃষিকাজই তাঁদের একমাত্র উপার্জনের অবলম্বন। কিন্তু গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে যে একশ্রেণির ভূমিদস্যু কয়েক বছর ধরে কৃষিজমিতে অবৈধভাবে পুকুর খনন করে পরিবেশ দূষণ করছে। এর ধারাবাহিকতায় ১৭ ডিসেম্বর রাতের বেলায় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই উপজেলার ভীমনগর গ্রামের দুই ভাই রুহুল আমিন ও রুবেল হোসেন, জাকির হোসেন, আনিসুর রহমান (বকুল) এবং ভাতুড়িয়া গ্রামের বিপ্লবের নেতৃত্বে মোহনপুর উপজেলার ধুরইল ইউনিয়নের বড় পালশা গ্রামে জোরপূর্বক পুকুর খনন করতে যান। স্থানীয় জনসাধারণ এতে বাধা দেন। এ সময় ভূমিদস্যুদের নির্দেশে এক্সকাভেটর মেশিনের চালক আবদুল হামিদ জমির মালিকের ছেলে আহমেদ জোবায়েরকে মেশিনের মাথা দিয়ে আঘাত করেন। এ সময় জোবায়ের মাটিতে লুটিয়ে পড়লে মেশিনের চাকায় পিষ্ট করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা করা হলেও এখন পর্যন্ত প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তারের তেমন তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়নি।
প্রকৃত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার, মেশিনের চালককে দ্রুত রিমান্ডে আনা, মোহনপুর উপজেলায় কৃষিজমিতে অবৈধভাবে পুকুর খনন বন্ধ করা, আহমেদ জোবায়ের পরিবারের নিরাপত্তা প্রদান করাসহ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে স্মারকলিপিতে।
কৃষকদের স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেছেন জানিয়ে ইউএনও ফাহিমা বিনতে আখতার বলেন, বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। প্রশাসন সব সময় অবৈধ পুকুর খননসহ যেকোনো অবৈধ কাজের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে রয়েছে। তিনি এই কৃষক হত্যার ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পাশাপাশি আসামিদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে পুলিশকে অনুরোধ করেছেন বলে জানিয়েছেন। কৃষকদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন ইউএনও।