পঞ্চগড় সদর উপজেলায় মেসেঞ্জার গ্রুপে কথা-কাটাকাটির জেরে সোহান আলী (১৫) নামের এক স্কুলছাত্রকে ছুরিকাঘাত ও মারধর করা হয়েছে। এ ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১২ ছাত্রকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন।
গুরুতর আহত অবস্থায় সোহান বর্তমানে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল সোমবার দুপুরে অমরখানা ইউনিয়নের অমরখানা উচ্চবিদ্যালয়–সংলগ্ন ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে সোহানের ওপর হামলা হয়। রাত সাড়ে ১০টার পর তার ভাই রশিদুল ইসলাম বাদী হয়ে আটক ১২ কিশোরসহ মোট ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে পঞ্চগড় সদর থানায় মামলা করেন।
অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সোহান অমরখানা উচ্চবিদ্যালয়ে পড়ে। সে সদর উপজেলার বদিনাজোত এলাকার ভ্যানচালক তরিকুল ইসলামের ছেলে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে তাকে প্রথমে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকেরা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে স্বজনেরা তাকে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
আহত কিশোরের পরিবার ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ১০-১২ দিন আগে একটি ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপে সোহান ও অভিযুক্তদের মধ্যে কথা–কাটাকাটি ও গালিগালাজ হয়। গতকাল বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার পথে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে অভিযুক্ত কিশোরেরা সোহানকে ঘিরে ফেলে। এ সময় লোহার রড ও সাইকেলের ফ্রিহুইল দিয়ে তৈরি বিশেষ বস্তু দিয়ে তার মাথায় আঘাত করা হয়।
পরে ধারালো ছুরি দিয়ে বুকে আঘাত করলে তা ঠেকাতে গিয়ে তার বাঁ হাতের কবজির রগ কেটে যায়। সোহান চিৎকার করলে স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। একই সময় স্থানীয়রা অভিযুক্তদের মধ্যে ১২ জনকে ধরে মারধর করে। অমরখানা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আমিরুল ইসলামসহ কয়েকজন শিক্ষক উত্তেজিত জনতার হাত থেকে ওই ১২ কিশোরকে উদ্ধার করে বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণিকক্ষে আটকে রাখেন। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়ে তাদের হেফাজতে নেয়।
সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সদর থানার নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কে আটক কিশোরদের দেখতে ও খাবার দিতে যান তাদের কয়েকজন স্বজন। তাঁদের একজন এক কিশোরের দাদা বলেন, ‘আমার নাতি করতোয়া কালেক্টরেট আদর্শ শিক্ষা নিকেতনে পড়ে। আজ ওর পরীক্ষা ছিল। কিন্তু অমরখানায় সে কেন গেছে, কিছুই বলতে পারছি না।’মামলার বাদী রশিদুল ইসলাম বলেন, ‘ফেসবুকের মেসেঞ্জার গ্রুপে কথা-কাটাকাটির জেরে ওরা আমার ছোট ভাই সোহানকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে এভাবে আঘাত করেছে। পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে আমার ভাইয়ের অবস্থা খারাপ হওয়ায় রংপুর মেডিকেলে রেফার করেছে। কিন্তু পথে ওর শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় আর টাকাপয়সার সমস্যা থাকায় তাকে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেছি। আমরা এই ঘটনার বিচার চাই।’
পঞ্চগড় সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অশীষ কুমার শীল বলেন, ‘এ ঘটনায় গতকাল রাতেই মামলা হয়েছে। সকালে আমাদের হেফাজতে থাকা ১২ কিশোরকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’