কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তরে জামায়াত নেতা মাহবুব আলম মুন্সী (গোল চিহ্নিত)
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তরে জামায়াত নেতা মাহবুব আলম মুন্সী (গোল চিহ্নিত)

মুরাদনগরে প্রকৌশলীকে ‘লাইথ্যাইয়া বাইর করে দেওয়ার’ হুমকি জামায়াত নেতার, ভিডিও ভাইরাল

কুমিল্লায় মুরাদনগরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তরে ঢুকে তাঁকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় এক নেতার বিরুদ্ধে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সে উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তরে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার ২০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটিতে দেখা যায়, উপজেলা প্রকৌশলী কাজী ফয়সাল বারী তাঁর দপ্তরের চেয়ারে বসে আছেন। তাঁর টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন উপজেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মাহবুব আলম মুন্সী। উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে তাঁর তর্কবিতর্ক চলছে। একপর্যায়ে মাহবুব আলম প্রকৌশলীর উদ্দেশে বলেন, ‘আরে বেটা লাইথ্যাইয়া এইখানতে বাইর কইরা দিমু, চিনোস আমারে।’ এ কথা বলার পর প্রকৌশলী বলতে থাকেন, ‘আপনি কী বললেন এটা, আপনি কী বললেন এটা।’ এ সময়ে মাহবুব আলমের সঙ্গে থাকা কয়েকজন তাঁকে শান্ত করার জন্য কার্যালয় থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

জানতে চাইলে জামায়াত নেতা মাহবুব আলম মুন্সী প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি ভিন্নভাবে প্রচার করা হয়েছে। মূল ঘটনাটি হলো উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের বাসকাইট থেকে প্রান্তি বাজার পর্যন্ত সড়কটির খুবই বেহাল অবস্থা। সেই রাস্তার সংস্কারের একটি আবেদন নিয়ে তিনিসহ কয়েকজন উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে যান। কিন্তু তিনি আবেদনটি দেখে গড়িমসি শুরু করেন। প্রকৌশলী বলেন, ‘এটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দায়িত্ব।’ পরে তিনি তাঁকে বলেন, ইউএনওই তাঁদের তাঁর কাছে পাঠিয়েছেন। রাস্তাটির সংস্কার খুবই জরুরি—বিষয়টি বোঝাতে গেলে তিনি রেগে যান। প্রকৌশলী বলেন, ‘যদি রাস্তা ভেঙে পানি জমে, আপনারা গিয়ে বালতি দিয়ে পানি পরিষ্কার করেন।’ এরপর তিনি উত্তেজিত হয়ে যান। একপর্যায়ে তাঁকে আনসার দিয়ে আটক করার হুমকি দেন। তখন তিনি রেগে গিয়ে ওই কথা বলেন।

মাহবুব আলম মুন্সীর দাবি, ঘটনার পর তাঁদের মুরব্বিরা (দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা) এসে ইউএনওর দপ্তরে বসে ঘটনাটির সুরাহা করে দিয়েছেন। তখন শর্ত অনুযায়ী মাহবুবের কাছে কিছু ভিডিও ছিল, সেগুলো তিনি মুঠোফোন থেকে মুছে দেন। তিনি বলেন, ‘পুরো ঘটনার সময় আমাদের প্রায় ১০ মিনিট তর্কবিতর্ক হয়েছে। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, মাত্র ২০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। প্রকৌশলী মানুষের সমস্যার কথাগুলো ভালোভাবে শুনে সমাধান করার আশ্বাস দিলে এমন ঘটনা ঘটত না।’

ঘটনাটি দুঃখজনক মন্তব্য করে উপজেলা জামায়াতের আমির আ ন ম ইলইয়াস বলেন, ‘একপক্ষ থেকে তো আসলে কোনো ঘটনা তৈরি হয় না। যা-ই হোক বিষয়টি আমরা ইউএনওর অফিসে বসে উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে সুরাহা করেছি। এই ঘটনায় আমরা দুঃখ প্রকাশ করেছি। এ ধরনের ঘটনা না হওয়াটাই সবার জন্য ভালো।’

এ বিষয়ে কথা বলতে উপজেলা প্রকৌশলী কাজী ফয়সাল বারীর মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি ধরেননি। তবে এলজিইডির কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল মতিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের হাতে প্রশাসনিক কোনো ক্ষমতা নেই। আমরা মানুষের কল্যাণে কাজ করি এবং মাঠে-সড়কেই পড়ে থাকি। মুরাদনগর উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে, এমন ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য না। ঘটনাটি সঙ্গে সঙ্গে ইউএনওকে জানানো হয়েছে। পরে তিনি বসে সেটি সমাধান করেছেন বলে জেনেছি।’

জানতে চাইলে মুরাদনগরের ইউএনও মো. আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা রাস্তা সংস্কারের আবেদন নিয়ে প্রথমে তাঁর কাছে এসেছিলেন। পরে তিনি তাঁদের উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে পাঠান। কিন্তু সেখানে এমন ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিষয়টি জানতে পেরে তাঁরা ঘটনাটি নিয়ে বসেন। তখন তাঁরা (জামায়াত নেতা) এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন। এখন পর্যন্ত ঘটনাটি এ পর্যায়ে রয়েছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যিনি এ ঘটনার ভুক্তভোগী, তিনি চাইলে অবশ্যই মামলা করতে পারেন। কোনো ব্যক্তিই এভাবে কাউকে হুমকি দিয়ে কথা বলতে পারেন না।’