সাজ্জাদ হোসেনের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী তামান্না শারমিন
সাজ্জাদ হোসেনের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী তামান্না শারমিন

চার হত্যা মামলায় জামিন পেলেন আলোচিত ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদ ও তাঁর স্ত্রী তামান্না

চারটি হত্যা মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন চট্টগ্রামের আলোচিত ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ ও তাঁর স্ত্রী শারমিন তামান্না। গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে হাইকোর্ট থেকে তাঁরা জামিন পান। তবে ওই আদেশ চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে চট্টগ্রামের আদালতে পৌঁছালে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

বর্তমানে সাজ্জাদ রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে এবং তাঁর স্ত্রী তামান্না ফেনী জেলা কারাগারে রয়েছেন। গত মাসে তাঁদের চট্টগ্রাম কারাগার থেকে ওই দুই কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সরকারি কৌঁসুলি রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, চারটি মামলায় সাজ্জাদ ও তাঁর স্ত্রী উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। আদেশগুলো চট্টগ্রাম আদালতে আসার পর বিষয়টি জানাজানি হয়। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে আরও একাধিক মামলা থাকায় আপাতত কারাগার থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না।

রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী আরও বলেন, এ জামিন আদেশ স্থগিতের বিষয়ে হাইকোর্টের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে কথা হয়েছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেবে। পাশাপাশি বাকি মামলাগুলোয় যাতে জামিন না পান, সে বিষয়েও রাষ্ট্রপক্ষ সতর্ক থাকবে।

পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, সাজ্জাদ ১০টি হত্যাসহ মোট ১৯টি মামলার আসামি। তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধেও একাধিক হত্যাসহ আটটি মামলা রয়েছে।

গত ১৫ মার্চ ঢাকার একটি শপিং মল থেকে সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘বান্ডিল বান্ডিল টাকা ছুড়ে’ সাজ্জাদকে জামিনে মুক্ত করার কথা উল্লেখ করে তামান্নার একটি বক্তব্যের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এরপর তাঁকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

আদালত সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট চান্দগাঁও থানার দোকান কর্মচারী শহিদুল ইসলাম হত্যা মামলায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর সাজ্জাদ ও তামান্নাকে জামিন দেন হাইকোর্ট। একই দিন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ পাঁচলাইশ থানার ওয়াসিম আকরাম হত্যা মামলায় এ দম্পতিসহ তিনজনকে জামিন দেন। এক সপ্তাহ পর, ২২ সেপ্টেম্বর একই বেঞ্চ পাঁচলাইশ থানার দোকান কর্মচারী মো. ফারুক হত্যা মামলায় এবং চান্দগাঁও থানার আফতাব উদ্দিন হত্যা মামলায়ও তাঁদের জামিন দেওয়া হয়।

আফতাব হত্যা মামলাটি ছাড়া বাকি তিনটি মামলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলন চলাকালে গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা। সাজ্জাদ ও তাঁর স্ত্রী গ্রেপ্তার হওয়ার পর পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এসব মামলায় আদালত তাঁদের গ্রেপ্তার দেখান। চারটি মামলাতেই রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিন দেওয়া হয়েছে।

এদিকে সাজ্জাদ কারাগারে থাকলেও তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনীর তৎপরতা থেমে নেই বলে জানিয়েছে পুলিশ। বাহিনীর অন্তত অর্ধশত সদস্য খুন, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। সাজ্জাদের অনুপস্থিতিতে মোহাম্মদ রায়হান, মোবারক হোসেন ইমন, বোরহান উদ্দিন কাদের ও নাজিম বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে পুলিশের ভাষ্য।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ৫ নভেম্বর বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর গণসংযোগ চলাকালে একটি গলিতে গুলির ঘটনা ঘটে। এতে বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহসহ পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনাস্থলে নিহত হন সরোয়ার হোসেন বাবলা নামের এক সন্ত্রাসী। তাঁর বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা রয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সরোয়ারকে গুলি করা হয়। তবে ভিড়ের মধ্যে গুলি চালানো শুটারকে এখনো শনাক্ত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।