বার্ষিক পরীক্ষা দিতে বিদ্যালয়ে এসেছিল দুই শিক্ষার্থী। শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে পরীক্ষা হবে না জেনে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে তারা। আজ সোমবার দুপুরে যশোর জিলা স্কুলে
বার্ষিক পরীক্ষা দিতে বিদ্যালয়ে এসেছিল দুই শিক্ষার্থী। শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে পরীক্ষা হবে না জেনে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে তারা। আজ সোমবার দুপুরে যশোর জিলা স্কুলে

যশোরে মাধ্যমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি

‘আগামীকালের পরীক্ষা হবে কি না, সেটাও জানতে পারছি না’

সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা। যশোর জিলা স্কুলের মূল ফটকে দাঁড়িয়ে আছে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. মুবিন হোসেন। তার হাতে একটি সাদা ফাইল। ফাইলের ভেতরে কলম ও প্রবেশপত্র। ফটকের পাশে ছোট একটি ঘর। সেখানে বসে আছেন নিরাপত্তা প্রহরী। তিনি মুবিনকে বললেন, ‘স্যাররা বলেছেন, আজ পরীক্ষা হবে না।’

এরপর কথা হয় মো. মুবিন হোসেনের সঙ্গে। সে জানায়, ‘আজ আইসিটি (তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি) পরীক্ষা ছিল। দুপুর একটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত। পরীক্ষা দিতে এসেছি। এখন শুনছি আজ পরীক্ষা হবে না। আগামীকালের পরীক্ষা হবে কি না, সেটাও জানতে পারছি না।’

দেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা চার দফা দাবিতে কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন। বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির ডাকে যশোর জিলা স্কুল, যশোর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, মনিরামপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় এবং মনিরামপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কর্মবিরতি পালন করছেন। বিদ্যালয়গুলোতে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা এবং দশম শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষা চলছে। শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে এই চারটি বিদ্যালয়ের আজকের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু যশোর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় গতকাল রোববার একটি নোটিশ দিয়ে ‘অনিবার্য কারণবশত’ আজকের পরীক্ষা বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দেয়। অন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সকালে ও বিকেলের পালায় পরীক্ষা দিতে এসে এভাবেই ফিরে যায়।

বেলা ১১টা ৫৩ মিনিটে আইসিটি পরীক্ষা হবে না জেনে ফিরে যাচ্ছিল যশোর জিলা স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির দুই ছাত্র মুনকার নাঈম রুশদী ও ইয়াসির আরাফাত মাহিন। বিদ্যালয়ের মূল ফটক দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তারা জানায়, আগে থেকে জানতে পারেনি আজ পরীক্ষা হবে না। কেউ বলেননি। এখন শুনছে পরীক্ষা হবে না। এ জন্য বাসায় ফিরে যাচ্ছে।

যশোর জিলা স্কুল সূত্র জানায়, গত ২০ নভেম্বর থেকে ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা এবং ২৬ নভেম্বর থেকে দশম শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আগামী ৭ ডিসেম্বর বার্ষিক এবং ১১ ডিসেম্বর নির্বাচনী পরীক্ষা শেষ হবে।

সূত্র জানায়, বিদ্যালয়ে দুই পালায় (শিফট) পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। সকালের পালায় ৯টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকেলের পালায় বেলা ১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত পরীক্ষা হয়। আজ সোমবার সকালে সপ্তম ও নবম শ্রেণির তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি পরীক্ষা ছিল। বিকেলে ষষ্ঠ শ্রেণির তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, অষ্টম শ্রেণির ধর্ম এবং দশম শ্রেণির ইংরেজি প্রথম পত্রের পরীক্ষা ছিল।

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘কর্মবিরতির কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা সাময়িক অসুবিধায় পড়েছে। আমরা তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়টি জানাইনি। তারা বিভিন্নভাবে জেনেছে। অনেক শিক্ষার্থী আজ বিদ্যালয়ে এসে জেনেছে। এ জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। সরকারকে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।’

যশোর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যালয়ে দূর-দূরান্ত থেকে এসে ছাত্রীরা ক্লাস করে, পরীক্ষা দেয়। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে তারা যাতে ভোগান্তিতে না পড়ে সে জন্য বিদ্যালয়ের ফেসবুক পেজে রোববার রাতে পরীক্ষা বন্ধের ব্যাপারে একটি নোটিশ দিয়েছি।’

সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষদের চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে—‘সহকারী শিক্ষক’ পদটিকে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারভুক্ত করে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গেজেট দ্রুত সময়ে প্রকাশ করা; বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় কর্মরত শিক্ষকদের বিভিন্ন শূন্য পদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন দ্রুত কার্যকর করা; সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে বকেয়া টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের মঞ্জুরি আদেশ তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রদান এবং ২০১৫ সালের আগের মতো সহকারী শিক্ষকদের ২ থেকে ৩টি ইনক্রিমেন্টসহ অগ্রিম বর্ধিত বেতনসুবিধা বহাল করে গেজেট প্রকাশ করা।