বিএমডিএর ইডিকে দপ্তর থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনায় মনগড়া তদন্ত কমিটির অভিযোগ

রাজশাহী নগরের বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যালয়
ফাইল ছবি

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) সদ্য সাবেক নির্বাহী পরিচালক (ইডি) শফিকুল ইসলামকে তাঁর দপ্তর থেকে বের করে দেওয়া এবং অফিস আদেশ ছাড়াই তাঁর চেয়ারে আরেকজন প্রকৌশলীর বসে পড়ার ঘটনায় সংস্থার চেয়ারম্যান মনগড়া তদন্ত কমিটি করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিএমডিএ পরিচালনা বোর্ডের সদস্য সাইফুল ইসলাম এ ব্যাপারে অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর দাবি, কৃষি উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী তাঁকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি করতে বলেছিলেন। কিন্তু বিএমডিএর চেয়ারম্যান এম আসাদুজ্জামান উপদেষ্টার নির্দেশনা আমলে না নিয়ে ইচ্ছেমতো তদন্ত কমিটি করেছেন। এই কমিটি ভেঙে দিতে সাইফুল ইসলাম আজ বৃহস্পতিবার বিএমডিএ চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছেন।

চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সহকারী এস এম রফিকুল ইসলাম চিঠিটি গ্রহণ করেছেন। চিঠিতে সাইফুল ইসলাম লিখেছেন, ‘গত ২৩ মার্চ বিএমডিএর প্রধান কার্যালয়ে নির্বাহী পরিচালকের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা তদন্তের জন্য কৃষি উপদেষ্টা বিএমডিএর অন্যতম বোর্ড সদস্য সাইফুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশনা দেন।’

চেয়ারম্যানের উদ্দেশে সাইফুল ইসলাম আরও লেখেন, ‘উপদেষ্টার নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটিয়ে আপনি (চেয়ারম্যান) ২ এপ্রিল বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বোর্ডরুমে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে একটি সভা আহ্বানের কথা উল্লেখ করে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান। পরবর্তী সময় জানতে পারি, নির্ধারিত দিনে সভা স্থগিত না করে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য আপনি ঠাকুরগাঁও চলে যান। ৮ এপ্রিল আপনার স্বাক্ষরিত একটি পত্র মারফত জানতে পারলাম, ৩ এপ্রিল একটি সভা করে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং আরও অধিকতর তদন্তের জন্য আজ (১০ এপ্রিল) সভা আহ্বান করা হয়েছে।’

এসব কৃষি উপদেষ্টার নির্দেশনা পরিপন্থী এবং এই ধরনের কার্যক্রম উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে চিঠিতে উল্লেখ করেন বিএমডিএ পরিচালনা বোর্ডের সদস্য সাইফুল ইসলাম। তাই তিনি আজকের সভায় অংশগ্রহণ করেননি বলে চিঠিতে উল্লেখ করেন। পাশাপাশি ‘তথাকথিত’ ও ‘পরিকল্পিত’ তদন্ত কমিটি ভেঙে কৃষি উপদেষ্টার নির্দেশ মোতাবেক নতুন কমিটি গঠন করে পুনঃ তদন্ত কার্যক্রম শুরু করার আহ্বান জানান তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত বছরের ১৪ জুলাই বিএমডিএর ইডি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন সরকারের অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তাঁকে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক হিসেবে বদলি করা হয়। কিন্তু এক মাস ধরেও তিনি বিএমডিএ ছাড়ছিলেন না। ফলে ২৩ মার্চ একদল কর্মকর্তা-কর্মচারী গিয়ে তাঁকে রাজশাহীর সদর দপ্তরের কার্যালয় ছাড়তে বাধ্য করেন। তাঁর চেয়ারে অতিরিক্ত প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খান বসে পড়েন। এরপরই শফিকুল ইসলামকে হেনস্তার অভিযোগে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন শফিকুল ইসলাম। পরে ১৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম উল্লেখ করে তিনি মামলাও করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় আরও ৫০ থেকে ৬০ জনকে।

ঘটনার পরপরই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। এ ছাড়া একজন নির্বাহী প্রকৌশলী ও একজন সহকারী প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আর শোকজ করা হয়েছে আটজনকে। এসব ঘটনায় বিএমডিএতে এখন চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। অভিযোগ রয়েছে, বিএমডিএ চেয়ারম্যানের সম্মতিতেই ইডিকে তাঁর দপ্তর ছাড়তে বাধ্য করেছিলেন কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী।

বিএমডিএ পরিচালনা বোর্ডের সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষি উপদেষ্টা নির্দেশনা দিয়েছেন, আমাকে আহ্বায়ক করে যেন বিএমডিএ একটি তদন্ত কমিটি করে। কিন্তু চেয়ারম্যান সেই নির্দেশনা অমান্য করে নিজের মনমতো একটা কমিটি করেছেন। এই কমিটি অপরাধীদের অপরাধ আড়াল করতে পারে। তাই এটা বাতিল হওয়া উচিত।’

বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে বিএমডিএ চেয়ারম্যান এম আসাদুজ্জামানকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।