ঘন কুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করে কাজে বের হয়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। আজ বুধবার সকাল ৯টার দিকে চুয়াডাঙ্গা শহরের কেদারগঞ্জে
ঘন কুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করে কাজে বের হয়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। আজ বুধবার সকাল ৯টার দিকে চুয়াডাঙ্গা শহরের কেদারগঞ্জে

চুয়াডাঙ্গায় আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা

‘আমাগের খাইটে খাতি হয়, তাই কষ্ট কইরে বের হইচি’

হিমেল হাওয়ার দাপটে কাঁপছে চুয়াডাঙ্গা। আজ বুধবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে, যা চলতি মৌসুমে জেলায় সর্বনিম্ন। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ। পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্র সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, গতকাল মঙ্গলবার একই সময়ে জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা ৯৭ শতাংশ। বাতাসের আর্দ্রতা পরিবর্তন না ঘটলেও এক দিনের ব্যবধানে জেলায় তাপমাত্রা নেমেছে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা আর উত্তরের হিমেল হাওয়ার তীব্রতা বেড়েছে, এ কারণে তুলনামূলক বেশি ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে।

গতকাল মধ্যরাত থেকে কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায় জেলার বিভিন্ন এলাকা। ঘন কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা কমে আসায় যানবাহনগুলো আজ সকালে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করে। শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি আবহাওয়ার কারণে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

সকাল সকাল কুয়াশা ভেদ করে ভ্যান নিয়ে চুয়াডাঙ্গা শহরের কেদারগঞ্জ এলাকায় আসেন সদর উপজেলার নেহালপুর ইউনিয়নের কুন্দিপুর গ্রামের বাসিন্দা রাজমিস্ত্রির সহকারী আবদুল কুদ্দুস। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আইজ খুপ জাড় লাগজে। মনডা বলচে, না খ্যাতার ভিতরতি উটি, বাইরি বের হই। গরিব মানুষ, আমাগের খাইটে খাতি হয়, তাই কষ্ট কইরে বের হইচি।’

শহরের মাছের আড়ত এলাকায় কথা হয় মৎস্যজীবী সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। পৌর এলাকার সরদারপাড়ার বাসিন্দা সাইফুল বলেন, ‘আনা বচরের চাইতি এবেড্ডা শীত বেশি। ঠান্ডায় আমরা পানিতি লাবতি পারচি নে। মাচ তুলতি পারচি নে। কুয়াশার মদি কিচুই দেকা যাচ্চে না। পুকুরতি মাচ বাজারে আনতি গিয়ে থরথর কইরে কাঁপচি।’

এদিকে সকাল সাড়ে ১০টার সময়েও সূর্যের দেখা মেলেনি। পৌর এলাকার ইসলামপাড়ার বাসিন্দা রিকশাচালক আবদুস সালামের সঙ্গে কথা হয় বড়বাজার এলাকায়। তিনি জানান, চুয়াডাঙ্গায় তিন-চার দিন ধরে শীত পড়ছে। সূর্য উঠছে না। কষ্ট করে বাড়ি থেকে বের হলেও যাত্রীরা ঠান্ডায় কম বের হচ্ছেন। ফলে বেকার বসে থাকতে হচ্ছে।

শীতের তীব্রতা গতবারের তুলনায় এবার বেশি দাবি করে শহরতলী দৌলাতদিয়াড় এলাকার নৈশপ্রহরী আব্বাস উদ্দিন গতকাল রাতে বলেন, ‘অ্যারাম জাড় অনেক দিন লাগিনি। জাড় এভাবে বাড়তি থাকলি সামনের দিনগুনু কীভাবে রাত পার কইরবো—সেইডেই বড় চিন্তা।’

চুয়াডাঙ্গার আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ১১ নভেম্বর থেকে তাপমাত্রা ক্রমশ নিচের দিকে নামতে থাকে। এ দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৫ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবারের আগে গত দেড় মাস ধরে তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি থেকে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করে।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারটির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, সূর্য না ওঠায় এবং উত্তরের ঠান্ডা বাতাস ও কুয়াশার কারণে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে জেলায় শৈত্যপ্রবাহ বইতে পারে।