চট্টগ্রাম আদালত ভবন
চট্টগ্রাম আদালত ভবন

কিশোরকে হত্যার পর লাশে আগুন, ৭ বছরেও মেলেনি তার পরিচয়

সাত বছর আগে চট্টগ্রাম নগরের হালিশহরে একটি পরিত্যক্ত সীমানাদেয়ালের ভেতর থেকে দগ্ধ এক কিশোরের লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। কিন্তু কে এই কিশোর, কীভাবেই–বা আগুনে পুড়েছে সে, তার কারণ জানা যায়নি আজও। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এটুকু নিশ্চিত হওয়া গেছে, ওই কিশোরকে খুন করা হয়েছিল। তার মাথায় আঘাতেরও চিহ্ন ছিল।

এ ঘটনায় হওয়া মামলার তদন্তকারী পাল্টেছে একের পর এক। শেষে সপ্তম তদন্তকারী কর্মকর্তা কিছুই করতে না পেরে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন গত জুন মাসে। চলতি আগস্টে আদালত তা গ্রহণ না করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল। সেদিন রাতে দুর্গন্ধ পেয়ে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ এসে নগরের হালিশহরে ফইল্যাতলী খালপাড় এলাকার একটি পরিত্যক্ত সীমানাদেয়ালের ভেতর থেকে ১৬–১৭ বছর বয়সী এক কিশোরের লাশ উদ্ধার করে। আগুনে তার শরীরের ৯০ শতাংশ অংশ পুড়ে যায়। এ ঘটনায় হালিশহর থানায় মামলা করে পুলিশ। পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে লাশটি আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামকে হস্তান্তর করা হয়।

শুরুতে মামলাটি তদন্ত শুরু করে হালিশহর থানা-পুলিশ। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে দুর্জয় চক্রবর্তী ও জীবন চক্রবর্তীকে গ্রেপ্তার করলে ওই বছরের ২৬ এপ্রিল জীবন চক্রবর্তী জবানবন্দি দেন। এতে স্বীকার করেন, পুড়ে যাওয়া লাশের নাম দিলীপ আচার্য। গাঁজা সেবনের জন্য সহকর্মীর (দিলীপ) কাছ থেকে ৫০ টাকা ধার নেন দুজন। ধারের টাকা না দেওয়ায় ওই সহকর্মী তাঁদের চড় মারে। এর প্রতিশোধ নিতেই গলায় গামছা পেঁচিয়ে খুন করেন সহকর্মীকে। এতেই ক্ষান্ত হননি, প্রমাণ মুছে দিতে লাশ পুড়িয়েও দেন।

কিন্তু গোল বাধে দেড় বছরের মাথায় মৃত দিলীপ আচার্য নিজেই আদালতে হাজির হলে! আদালত প্রশ্ন তোলেন, তাহলে ১৬৪ ধারার জবানবন্দি কীভাবে এল? জবাবে আসামি জানালেন, চার দিন ধরে টানা নির্যাতন আর রীতিমতো ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে পুলিশের সাজানো গল্পই তিনি আদালতে জবানবন্দি হিসেবে দিয়েছেন। ২০২২ সালের ২২ অক্টোবর নির্দেশ দিলে দিলীপ আচার্য নিজে, মামলার প্রথম তদন্তকারী হালিশহর থানার তৎকালীন এসআই সাইফুদ্দীন ও কামরুল ইসলাম এবং জবানবন্দি প্রদানকারী আসামি জীবন চক্রবর্তী (১৮) ও আসামি দুর্জয় আচার্য (১৮) হাজির হন। তাঁরা দুজনই একটি রডের কারখানায় কাজ করেন। বর্তমানে এই মামলায় তাঁরা দুজন জামিনে রয়েছেন।

হালিশহর থানা-পুলিশের আরও দুজন এসআই মামলাটি তদন্ত করেন। কিন্তু কিনারা করতে না পারায় ২০২২ সালে আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন। পিবিআইয়ের সাইফুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান ও মহিদুল আলম তদন্ত করেন। কিন্তু কেউ খুনের রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে পারেননি।

শেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক মহিদুল আলম আদালতে জমা দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, পোড়া লাশটির পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। ঘটনায় কে বা কারা জড়িত, তা তদন্তে পাওয়া যায়নি।

তবে সিআইডি আশাবাদী, তারা খুনের রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে পারবে। জানতে চাইলে সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার সূত্রধর ত্রিপুরা প্রথম আলোকে বলেন, বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সূত্রহীন এই খুনের মামলার রহস্য উদ্‌ঘাটনে কাজ করছে সিআইডি।