রাশিয়ায় গিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়ে নিহত হয়েছেন রাজবাড়ীর সদর উপজেলার সাবেক সেনাসদস্য নজরুল ইসলাম (৪৮)। পাঁচ মাস নিখোঁজ থাকার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাঁর মৃত্যুর খবর জানতে পেরেছে পরিবার।
নজরুল ইসলাম রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের চর রামকান্তপুর গ্রামের মৃত হাতেম আলী ফকিরের ছেলে। তাঁর স্ত্রী ও চার মেয়ে আছে। ২০২০ সালে তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, নজরুল ইসলাম শপিং মলের নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরি নিয়ে ২০২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ায় যান। সর্বশেষ গত ৩০ এপ্রিল মুঠোফোনে তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছিল। গত বুধবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাঁর মৃত্যুর খবর জানানো হয়।
নজরুল ইসলামের স্ত্রী আইরিন আক্তার বলেন, বাড়ির জমি বিক্রি ও ঋণ নিয়ে মোট ১৩ লাখ টাকা দিয়ে তাঁর স্বামী রাশিয়ায় যান। রাশিয়ায় পৌঁছে কিছুদিন বসে থেকে স্থানীয় খাবার হোটেলে কাজ করেন। কথা অনুযায়ী কাজ না হওয়ায় দালালের সঙ্গে মনোমালিন্য দেখা দেয়। নজরুলসহ কয়েকজনকে ইউক্রেন যুদ্ধে যেতে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীতে প্রশিক্ষণ নিতে বাধ্য করা হয়। কথা না শুনলে নানাভাবে কষ্ট দেওয়া হতো। তিনি লুকিয়ে দেশে ফেরার পরিকল্পনা করেন। গত ২৮ এপ্রিল ফোনে জানান, এক-দুই দিনের মধ্যে তাঁকে ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠানো হচ্ছে।
সর্বশেষ গত ৩০ এপ্রিল বিকেলে আইরিন আক্তারের সঙ্গে তাঁর স্বামীর কথা হয়। আইরিন আক্তার বলেন, ‘ওই দিন তিনি (নজরুল) বলেন, “ব্যাংকে আট লাখ টাকা পাঠাতে যাচ্ছি। দেনা পরিশোধ করে জমি ছাড়ানোসহ অন্যান্য কাজ কর।” কিছুক্ষণ পর আবার বলেন, “টাকা পাঠানো হচ্ছে না। আমাদের এখনই ইউক্রেন যুদ্ধে যেতে হচ্ছে। মনে হয় জীবিত ফিরতে পারব না। আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো। আমার চার মেয়েকে দেখে রেখ। তোমাদের জন্য কিছুই করতে পারলাম না।”এর পর থেকে তাঁর সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।’
আইরিন আক্তার জানান, গত মে মাসে স্বামীর বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, রাজবাড়ী সেনা ক্যাম্পসহ যশোর সেনানিবাসে জানান। জুন মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে স্বামীর অবস্থান জানতে এবং ফিরিয়ে আনার আবেদন করেন। গত বুধবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ফোনে জানানো হয়, তাঁর স্বামী ইউক্রেন যুদ্ধে মারা গেছেন। আগামী রোববার তাঁদের ঢাকায় যেতে বলা হয়েছে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারিয়া হক বলেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে বিষয়টি জেনেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পেলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।