ঢাকার কেরানীগঞ্জ

পাঁচ গ্রামের এক বিদ্যালয় 

ধলেশ্বরী নদীর তীর ঘেঁষে কেরানীগঞ্জের কলাতিয়া ও হযরতপুর ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামে এত দিন কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছিল না।

স্বাধীনতার ৫১ বছর পর বিচ্ছিন্ন পাঁচ গ্রামের শিক্ষার্থীরা পেল একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। গত সোমবার দুপুরে কেরানীগঞ্জ উপজেলার কলাতিয়া ইউনিয়নের হোগলাগাতি গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

‘এখন আর পোলামাইয়াগো ধলেশ্বরী নদী নৌউকা দিয়া পাড়ি দিতে অইব না। দেশ স্বাধীনের পর থেইক্যা আমগো পাঁচ গ্রামে কুনো মাধ্যমিক ইস্কুল আছিল না। এই বছর আমাগো গ্রামে ইস্কুল অইছে। অহন আর পোলামাইয়াগো নদী পাড়ি দিয়া ইস্কুলে যাইতে অইব না।’ উচ্ছ্বাসভরা কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন ঢাকার কেরানীগঞ্জের কলাতিয়া ইউনিয়নের হোগলাগাতি গ্রামের বাসিন্দা আইয়ুব আলী মিয়া।

স্বাধীনতার পর এখানে কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। তাদের কষ্টের কথা চিন্তা করে পাঁচ বিঘা জমি কিনে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। 
শাহীন আহমেদ, চেয়ারম্যান, কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ 

ধলেশ্বরী নদীর তীর ঘেঁষে কেরানীগঞ্জের কলাতিয়া ও হযরতপুর ইউনিয়নের জনবিচ্ছিন্ন পাঁচটি গ্রাম। গ্রামগুলো হচ্ছে চর চামারদহ, চর খাড়াকান্দি, হোগলাগাতি, মধুরচর ও দক্ষিণ ঢালিকান্দি। এই ৫ গ্রামে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের বসবাস।

গ্রাম ৫টিতে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও স্বাধীনতার ৫১ বছরেও ছিল না কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয়। সেখানকার শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগে কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুর এলাকার প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. নুর মোহাম্মদের নামে সম্প্রতি একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় করা হয়েছে।

কলাতিয়া ইউনিয়নের হোগলাগাতি গ্রামে স্থাপিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. নুর মোহাম্মদ উচ্চবিদ্যালয়টি উদ্বোধন করা হয় ১ জানুয়ারি। গ্রামগুলোর কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই বিদ্যালয়ের ফলে সরাসরি উপকৃত হবেন তাঁরা। তাঁদের সন্তানদের এখন থেকে আর ঝড়–বৃষ্টি উপেক্ষা করে ধলেশ্বরী নদী পাড়ি দিয়ে স্কুল পর্যায়ে অন্যত্র পড়তে যেতে হবে না। সম্ভব হবে প্রত্যন্ত এলাকাটিতে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধ করা।

বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ। বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর মোহাম্মদের স্মৃতিতে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। নিজ অর্থায়নে পাঁচ বিঘা জমি কিনে টিনশেডের বিদ্যালয়টি নির্মাণ করা হয়েছে।

শাহীন আহমেদ বলেন, ‘কেরানীগঞ্জের ছিটমহল বলে খ্যাত ৫টি গ্রামের ২০০–২৫০ শিক্ষার্থীকে ঝড়–বৃষ্টি উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ধলেশ্বরী নদী পাড়ি দিয়ে কেরানীগঞ্জের কলাতিয়া উচ্চবিদ্যালয় ও তালেপুর উচ্চবিদ্যালয়ে যেতে হতো। স্বাধীনতার পর এখানে কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। তাদের কষ্টের কথা চিন্তা করে পাঁচ বিঘা জমি কিনে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। এতে প্রায় কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। পাঁচ গ্রামের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মানোন্নয়ন ও শিক্ষার্থীরা যাতে ঝরে না পড়ে, সে জন্য এ উদ্যোগ।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবিদ হোসেন বলেন, গত ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে এই পর্যন্ত ৮০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছেন ১০ জন। বিদ্যালয়টিতে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হবে। বিদ্যালয়টিকে আধুনিক মানসম্মত বিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে।