দুই মাসের বেশি সময় ধরে ডুবে আছে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের ঝুলন্ত সেতুটি
দুই মাসের বেশি সময় ধরে ডুবে আছে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের ঝুলন্ত সেতুটি

রাঙামাটির ডুবে থাকা ঝুলন্ত সেতুটি কবে দৃশ্যমান হবে

রাঙামাটির সবুজ পাহাড়ের বুক চিরে চলছে নীলাভ জলের কাপ্তাই হ্রদ। এর মাঝে দাঁড়িয়ে আছে দেশের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ ঝুলন্ত সেতু। কিন্তু এবারের ভ্রমণে এই সেতু দেখে স্বপ্নভঙ্গ হলো ছোট্ট নিফান ইসলামের। মা–বাবার হাত ধরে ঢাকা থেকে যখন সে রাঙামাটির পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের পেছনে সেতুর কাছে গেল, তখন তার চোখে ছিল আনন্দের ঝিলিক। মুহূর্তেই সেই আলো নিভে গেল। পানিতে নিমজ্জিত সেতু দেখে বিস্ময় আর হতাশায় সে বলে উঠল, ‘বাবা, সেতু তো ডুবে আছে…।’

শিশু নিফানের মতো হাজারো পর্যটক প্রতিদিন এসে একই অভিজ্ঞতায় হতাশ হন। সেতুটি দুই মাসের বেশি সময় ধরে হ্রদের পানিতে ডুবে আছে। কেউ ছবি তুলতে পারেন না, কেউ সেতুর ওপরে হাঁটার আনন্দ পান না। স্থাপনাটি ডুবে যাওয়ায় হতাশ পর্যটকেরা। জানতে চাইছেন, কবে এ অবস্থার পরিবর্তন হবে।

রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশন সূত্রে জানা গেল, কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে যাওয়ায় গত ৩০ জুলাই থেকে ঝুলন্ত সেতুটি ডুবে আছে। গত রোববার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যা পর্যন্ত সেতুটি অন্তত তিন ফুট পানিতে ডুবে ছিল। গত বছরও প্রায় ৫৬ দিন ডুবে ছিল ঝুলন্ত সেতুটি।

ঝুলন্ত সেতু কেন বারবার ডু্বছে

২০১৭ সালে রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড়ধস হয়েছিল। এর পর থেকে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ঝুলন্ত সেতুটি পানিতে ডুবে থাকতে শুরু করে। এখন এটি নিয়মে পরিণত হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, কাপ্তাই হ্রদের পানির সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ১০৯ এমএসএল (মিনস সি লেভেল)। ১০৪ এমএসএলের একটু বেশি হলেই ডুবে যায় সেতুটি। প্রতিবছর জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসে হ্রদের পানি বাড়লে ডুবতে শুরু করে সেতু। এবার সেপ্টেম্বরে পানি ১০৮ এমএসএলের ওপরে পৌঁছে। এতে কাপ্তাই হ্রদের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় বাঁধের ১৬টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছিল।

ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ইব্রাহিম খলীল পরিবার নিয়ে এখানে বেড়াতে এসেছেন। শনিবার সকালে তাঁর পরিবারের পাঁচজন সেতুটি দেখতে আসেন। ইচ্ছা ছিল সেতুর ওপর দিয়ে হেঁটে পূর্ব পাড়ে যাবেন, সেখানকার পাহাড়ি পথে ঘুরবেন। সেতুর ওপরে দাঁড়িয়ে ছবি তুলবেন। সেতুর কাছে এসে হতাশ তাঁরা। তিনি বলেন, ‘রাঙামাটির পরিচিতি তুলে ধরে এই ঝুলন্ত সেতু। কিন্তু শুনলাম দুই মাসের বেশি সময় ধরে সেতুটি ডুবে আছে। কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, এটা শুনে মনটা আরও খারাপ হয়ে গেল।’

প্রতিবছর জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে কাপ্তাই হ্রদের পানি বাড়লে ডুবতে শুরু করে ঝুলন্ত সেতুটি

পর্যটন করপোরেশন সূত্র জানায়, ১৯৮৬ সালে জেলা শহরের তবলছড়ি এলাকায় বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের হলিডে কমপ্লেক্সের পেছনে ৩৩৫ ফুট দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। পরে এই সেতু পর্যটন করপোরেশনের কাছে হন্তান্তর করা হয়। দুই পাহাড়ের মাঝখানে দুটি পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা দৃষ্টিনন্দন সেতুটি পর্যটন শহর রাঙামাটির প্রতীক হিসেবে দেশ-বিদেশে পরিচিত। জেলায় প্রতিবছর পাঁচ লাখ পর্যটক আসেন। এর মধ্যে বর্ষাকালে ভ্রমণে আসেন লাখের বেশি পর্যটক।

কী ভাবছে কর্তৃপক্ষ

রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক অলোক বিকাশ চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, নির্মাণের পর সেতুটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রতিবছর এটির পাটাতনসহ কিছু অংশ মেরামত করা হয়। তবে বড় ধরনের মেরামত করা হয়নি। কয়েক বছর ধরেই বর্ষা মৌসুমে এটি ডুবছে। সেতুটি আরও আধুনিক ও নান্দনিক করে নির্মাণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড একটি প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। এটি অনুমোদন করা হলে এই সেতু হবে রাঙামাটির পর্যটনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্পট।