রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ভবন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ভবন

রাকসু নির্বাচনের নতুন তারিখ ১৬ অক্টোবর

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে আগামী ১৬ অক্টোবর নির্ধারণ করা হয়েছে। পোষ্য কোটা নিয়ে ক্যাম্পাসে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাকসু নির্বাচন কমিশনের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পরে রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাকসু, হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনপূর্ব উদ্ভূত পরিস্থিতি সার্বিকভাবে বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়। এ সভা লক্ষ করে যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজমান পরিস্থিতি কোনো অবস্থাতেই রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুকূল নয়।

নির্বাচন পেছানোর দুটি কারণ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। সেগুলো হচ্ছে, ১. বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ঘোষিত ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি চলছে। ২. নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে প্রয়োজনীয়সংখ্যক শিক্ষক/কর্মকর্তা/কর্মচারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়নি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উপর্যুক্ত বিবেচনায় রাকসু নির্বাচন উৎসবমুখর, অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার স্বার্থে কমিশন ২৫ সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে আগামী ১৬ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

উল্লেখ্য, পোষ্য কোটা নিয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনার জের ধরে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করছেন শিক্ষক–কর্মকর্তাদের একটি অংশ। ‘শিক্ষক-কর্মকর্তা লাঞ্ছনাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবিতে’ আজ দ্বিতীয় দিনের মতো এই কর্মসূচি চলে।

এর জের ধরে আজ দুপুরে শাখা ছাত্রদলসহ ৫টি প্যানেল রাকসু নির্বাচনের পরিবেশ নেই বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছে। তারা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে বেলা তিনটায় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও ভিপি পদপ্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ ২৫ সেপ্টেম্বরই নির্বাচন হতে হবে বলে দাবি জানিয়েছেন।

নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের ঘোষণা শিক্ষকদের একাংশের

প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা জানান, এর আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের কথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকদের একাংশ। আজ সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে এক সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পরিষদ’।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমপ্লেক্সের সামনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, ‘বাংলাদেশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পরিষদ’ জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত।

শিক্ষক পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সংগঠনের সেক্রেটারি অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন। এতে বলা হয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পরিষদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের নিয়ে একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের বহুল প্রত্যাশিত রাকসু নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে এ–সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমে শিক্ষকদের সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

একই সঙ্গে ২০ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসে সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় জড়িত দোষীদের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জোর দাবি জানানো হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন বলেন, সার্বিক বিষয়ে আজ একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পরিষদসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেছেন। সেখানে ২০ সেপ্টেম্বর সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করা হয়েছে।

মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ইতিমধ্যে বিভিন্ন ফোরাম একসঙ্গে বসে সম্মিলিত কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। রাকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি একদিকে প্রয়োজন, একই সঙ্গে কোনো কার্যক্রমের মাধ্যমে যাতে রাকসু নির্বাচন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্য পরিষদ জরুরি সভায় মিলিত হয়েছে। পরিষদ মনে করে, রাকসু নির্বাচনে সক্রিয় সহযোগিতা করা প্রয়োজন।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পরিষদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি অধ্যাপক জে এ এম সকিলউর রহমান, অধ্যাপক এ কে এম আবদুল লতিফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি স্লোগান

রাকসুর কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীদের দুটি পক্ষ। আজ সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটের দিকে বিক্ষোভ শুরু হয়। একটি পক্ষ ২৫ সেপ্টেম্বরই রাকসু নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছেন, আরেকটি পক্ষ ভোটারবিহীন রাকসু চায় না বলে স্লোগান দেন।

২৫ সেপ্টেম্বর রাকসু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছেন ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীসহ সমর্থকেরা। ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা ‘২৫ তারিখেই রাকসু, দিতে হবে, দিতে হবে’, ‘সিন্ডিকেটের কালো হাত, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’। অন্যপক্ষে বাম প্যানেলের প্রার্থীসহ বিভিন্ন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে দেখা গেছে। তাঁরা ‘ভোটারবিহীন রাকসু, মানি না মানব না’, ‘প্রহসনের নির্বাচন, মানি না মানব না’ ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছিলেন।

এর আগে বিকেল চারটায় জরুরি সভায় বসে নির্বাচন কমিশন। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় নির্বাচন পেছানোর সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।