মোহাম্মদ ছালেহ ও মো. হারুন
মোহাম্মদ ছালেহ ও মো. হারুন

বেঁচে থাকতে প্রতিবেশী ছিলেন, কবরেও পাশাপাশি তাঁরা

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী চরপাড়া গ্রামে গ্যাস সিলিন্ডারের গুদামে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত ছয়জনের মধ্যে একই গ্রামের বাসিন্দা রয়েছেন তিনজন। তাঁরা চন্দনাইশ উপজেলার পূর্ব সৈয়দাবাদের বাসিন্দা।

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুই প্রতিবেশী মোহাম্মদ ছালেহ ও হারুন ওরফে হারেজকে একই কবরস্থানে পাশাপাশি কবর দেওয়া হয়েছে। গ্রামের আরেক বাসিন্দা ইদ্রিচের কবর একই পাড়ার অন্য একটি কবরস্থানে। দুই প্রতিবেশী একসঙ্গে একই গুদামে চাকরি করতেন, চলাফেরাও ছিল একসঙ্গে। মৃত্যুও যেন বিচ্ছিন্ন করতে পারল না তাঁদের।

পূর্ব সৈয়দাবাদ গ্রামে থাকতেন কক্সবাজারের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইউসুফ। তিনিও চরপাড়ার গুদামে কাজ করতেন। বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় তাঁরও। তবে স্বজনেরা তাঁর লাশ নিয়ে গেছেন গ্রামের বাড়িতে।

চন্দনাইশ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সোলাইমান ফারুকী বলেন, তিনজনের বাড়ি পূর্ব সৈয়দাবাদে। তবে এই গ্রামের আকিব নামের আরও একজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁর অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

১৭ সেপ্টেম্বর চরপাড়া এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডারের গুদামটিতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় একে একে মারা যান গুদামের মালিক মাহবুবুর রহমান, শ্রমিক মোহাম্মদ ছালেহ, মো. হারুন, মো. ইদ্রিচ, মোহাম্মদ ইউসুফ ও মো. রিয়াজ নামের ছয়জন। তাঁদের মধ্যে চারজনই চন্দনাইশ উপজেলার। একজন লোহাগাড়ার ও একজন কক্সবাজারের বাসিন্দা।

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী চরপাড়ায় বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত গ্যাস সিলিন্ডারের গুদাম

এক গ্রামের এত মানুষ হতাহতের ঘটনায় স্তম্ভিত বাসিন্দারা। ভেঙে পড়েছেন নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা। গতকাল বুধবার সকালে পূর্ব সৈয়দাবাদে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামজুড়ে শোকের পরিবেশ। নিহত ব্যক্তিদের বাড়িতে কান্নার রোল। উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা সোলায়মান ফারুকী বলেন, ‘এই বিস্ফোরণে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে তিনজনের বাড়ি পূর্ব সৈয়দাবাদে। বাকিদের অবস্থাও সংকটাপন্ন।’

হারুন ওরফে হারেজের মা আনোয়ারা বেগম দিশাহারা। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় তিনি। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার আর কেউ নেই। ও-ই ছিল আমার সব। ওই গুদামে সেদিনই প্রথম কাজে গিয়েছিল। আর ফিরল না।’

নিহত ইদ্রিচের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। ইদ্রিচের বাবা মোহাম্মদ নাছিম বলেন, ‘আমার চার ছেলে, তিন মেয়ের মধ্যে ইদ্রিচ ছিল বড়। ছয় বছর আগে বিয়ে করেছিল। তার দুই মেয়ে, বড়টার বয়স পাঁচ, ছোটটার দুই বছর। সংসার চালাতে দিনমজুরি করত। মাত্র দুই সপ্তাহ হলো ওই গুদামে কাজ শুরু করেছিল। সেদিন আমি মাঠে কাজ করছিলাম। হঠাৎ শুনি বিস্ফোরণে সে আহত হয়েছে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর শনিবার রাতে ও মারা যায়।’

মোহাম্মদ ছালেহের ছোট ভাই আরাফাত বলেন, ‘আমার ভাইয়ের শরীরের প্রায় ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। ডাক্তাররা চেষ্টা করলেও বাঁচাতে পারেননি। আমাদের ঘরটা এখন শূন্য হয়ে গেল।’

চরপাড়ার মানুষজন তিনটি মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষুব্ধ। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, অবৈধভাবে গ্যাস সিলিন্ডারের গুদামটি চালু ছিল। কেউ নজরদারি না করায় এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে।