দেশের তিন জেলার সীমান্ত দিয়ে আরও ৫৬ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গতকাল সোমবার গভীর রাত ও আজ মঙ্গলবার ভোরে ময়মনসিংহ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও পঞ্চগড় সীমান্ত থেকে তাঁদের আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহে আটক করা ব্যক্তিদের মধ্যে একজন শিশু, তিনজন নারী ও আটজন পুরুষ। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁরা খুলনা বিভাগের বাসিন্দা। ২০০৪ সালে অবৈধভাবে ভারতের গুজরাট রাজ্যে গিয়ে বসবাস শুরু করেন তাঁরা।
বিজিবি জানিয়েছে, নেত্রকোনার অধীন ৩১ বিজিবির আওতাধীন ধোবাউড়ার মুন্সিপাড়া সীমান্ত দিয়ে দিবাগত রাত তিনটার দিকে ভারতের রসনাই গিরি বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা ১২ জনকে ঠেলে পাঠান। পরে বিজিবি তাঁদের আটক করে মুন্সিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়ে যায়।
আটক ব্যক্তিদের মধ্যে শরিফুল উল্লাহ নামের একজন বলেন, ২০০৪ সালে কাজের সন্ধানে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান। গুজরাটে পরিবার নিয়ে বসবাস করছিলেন এবং সেখানে একটি মুরগির দোকানে কাজ করতেন। গত ২৪ মে ভারতের পুলিশ তাঁদের আটক করে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করে। পরে বিএসএফ তাঁদের সঙ্গে থাকা টাকা, মুঠোফোনসহ অন্যান্য জিনিস রেখে সীমান্তে এনে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠায়।
বিজিবির মুন্সিপাড়া ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার খাইরুল ইসলাম বলেন, রাতে বিএসএফ ১২ জনকে পুশইন করে। তাঁরা সবাই খুলনা বিভাগের নাগরিক। ২০০৪ সালে তাঁরা ভারতে গিয়েছিলেন। বৈধ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে বিএসএফ তাঁদের পুশইন করেছে। বর্তমানে তাঁদের পুলিশের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
অন্যদিকে হালুয়াঘাট উপজেলার সূর্যপুর সীমান্ত দিয়ে গতকাল রাত তিনটার দিকে ৯ নারী ও ১ শিশুকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ। ময়মনসিংহ ৩৯ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ সানবীর হাসান মজুমদার বলেন, আটক হওয়া ১০ জনই বাংলাদেশি। তাঁদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে তাঁরা বিভিন্ন সময়ে ভারতে গিয়েছিলেন। তাঁদেরও পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার চাঁনশিকারী সীমান্ত দিয়ে আটজনকে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। আজ ভোরে তাঁদের আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বিজিবি ৫৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া বলেন, আজ ভোর সাড়ে চারটার দিকে বিএসএফ আটজনকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠায়। এর মধ্যে চারজন নারী ও চারজন পুরুষ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁদের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলায়।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া জানান, আটক ব্যক্তিরা বিজিবির চাঁনশিকারী সীমান্ত ফাঁড়িতে আছেন। তাঁদের ভোলাহাট থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। এ বিষয়ে পরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে।
পঞ্চগড়
পঞ্চগড়ের শিংরোড ও হাড়িভাসা সীমান্ত দিয়ে আবারও নারী-শিশুসহ ২৬ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ। গতকাল সোমবার মধ্যরাতে তাঁদের আটক করে পঞ্চগড় সদর থানায় আনে বিজিবি। আজ মঙ্গলবার বেলা পৌনে একটার দিকে নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ মো. বদরুদ্দোজা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ মাস থেকে ১০ বছর বয়সী ১০ জন শিশু, ২১ থেকে ৫৫ বছর বয়সী ৭ জন পুরুষ এবং ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ৯ জন নারী আছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানিয়েছেন, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী ও ফুলবাড়ি উপজেলায় তাঁদের বাড়ি।
বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল গভীর রাতে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিজিবির শিংরোড বিওপির আওতাধীন সীমান্তের ৭৬৪ নম্বর মেইন পিলারে ৭ নম্বর সাব পিলারসংলগ্ন খুনিয়াপাড়া এলাকায় সীমান্ত পার হয়ে পাঁচজন এবং রতনীবাড়ি এলাকায় সীমান্ত পার হয়ে ১২ জন বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। এ সময় বিজিবি সেখান থেকে ১৭ জনকে আটক করে। তাঁদের ভারতের ৯৩ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কৈলাশ বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা বাংলাদেশে ঠেলে পাঠান।
এ ছাড়া গভীর রাতে সদর উপজেলার ঘাগড়া বিওপির আওতাধীন সীমান্তের ৭৫৭ নম্বর মেইন পিলারে ১০ নম্বর সাব পিলারসংলগ্ন বড়দরগা-ঢাঙ্গীবাজার এলাকায় সীমান্ত পার হয়ে ৯ জন বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। এ সময় হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. ছামছোদ্দীন গ্রাম পুলিশদের সহায়তায় তাঁদের আটক করে ইউনিয়ন পরিষদে রাখেন। পরে সকালে সেখান থেকে বিজিবি ওই পাঁচজনকে আটক করে পঞ্চগড় সদর থানায় নিয়ে যায়। তাঁদের ভারতের ৯৩ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের টিয়াপাড়া বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা বাংলাদেশে ঠেলে দেন।
নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ মো. বদরুদ্দোজা বলেন, আটক করা ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে ভারতের দিল্লির আশপাশে বসবাস করছিলেন। সেখানে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা ইটভাটাসহ বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতেন। গত ২৮ মে তাঁদেরকে ভারতীয় পুলিশ আটক করে। পরে তাঁদের উড়োজাহাজে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাগডোগরা বিমানবন্দরে নিয়ে আসে। সেখান থেকে বাসযোগে তাঁদের সীমান্ত এলাকায় এনে বিএসএফের মাধ্যমে বাংলাদেশে পুশইন করে। এ বিষয় বিভিন্ন মাধ্যমে বিএসএফের সঙ্গে যোগযোগ করা হলে তারা পুশইনের বিষয়টি অস্বীকার করেছে। তবে এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানাতে এবং কারণ জানতে দুটি সীমান্তে কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে এবং ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠকের আহ্বান করা হয়েছে।
আজ দুপুরে পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ হিল জামান বলেন, বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা ২৬ জনকে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। তাঁদের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাঁদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে।
এর আগে গত ২১ মে রাতে পঞ্চগড়ের জয়ধরভাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে নারী, শিশুসহ ২১ জনকে ঠেলে পাঠায় বিএসএফ। এ ছাড়া ১৬ মে রাতে বোদা উপজেলার কাজলদিঘী-কালিয়াগঞ্জ ও বড়শশী ইউনিয়নের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে নারী, শিশুসহ ১১ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছিল বিএসএফ।
(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ; প্রতিনিধি, পঞ্চগড়)