চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার পারকি সমুদ্রসৈকতে নির্মাণ করা হচ্ছে পর্যটন কমপ্লেক্স। গত মঙ্গলবার তোলা
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার পারকি সমুদ্রসৈকতে নির্মাণ করা হচ্ছে পর্যটন কমপ্লেক্স। গত মঙ্গলবার তোলা

পারকি সৈকত পর্যটন কমপ্লেক্স

তিন বছরের কাজ শেষ হয়নি সাড়ে পাঁচ বছরেও

পারকি সৈকত পর্যটন কমপ্লেক্সের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। ৭৯ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ তিন বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। তবে পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত নির্মাণকাজ শেষ করা যায়নি।

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার পারকি সৈকত পর্যটন কমপ্লেক্সের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। ৭৯ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ তিন বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। তবে পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত নির্মাণকাজ শেষ করা যায়নি।

প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এরই মধ্যে প্রকল্পের ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের ঠিকাদারকে বাকি কাজ দ্রুত শেষ করতে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করে বুঝিয়ে দেবেন ঠিকাদার।

বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে পারকি সৈকতসংলগ্ন এলাকায় ১৩ দশমিক ৩৩ একর জায়গায় শুরু হয় ৭৯ কোটি টাকার এই উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজ। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে মাঝখানে দীর্ঘদিন ধরে প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখেন ঠিকাদার। এতে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায়নি।

পারকি সৈকত পর্যটন কমপ্লেক্সে নির্মাণাধীন কটেজ ও হ্রদ। গত মঙ্গলবার তোলা

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, ওই প্রকল্পের অধীন গড়ে তোলা হচ্ছে ১০টি সিঙ্গেল কটেজ (প্রতিটি ৮০০ বর্গফুটের), ১ হাজার ৩৫০ বর্গফুটের ৪টি ডুপ্লেক্স কটেজ, তিনতলাবিশিষ্ট মাল্টিপারপাস ভবন; যাতে রয়েছে অফিস ভবন ও রেস্তোরাঁ। প্রতিটি তলার আয়তন ৬ হাজার ৩২৩ বর্গফুট। তিনতলাবিশিষ্ট একটি সার্ভিস ব্লক নির্মাণ করা হচ্ছে, যেখানে অতিথিকক্ষ ও কর্মচারীদের কক্ষ থাকবে।

প্রকল্পের কাজগুলোকে তিন ভাগে বাস্তবায়ন করছে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে সীমানাপ্রাচীর ও ফটকের কাজ করছে রাজ করপোরেশন; বালু ভরাট, হ্রদ, ভেতরের রাস্তা ও নালার কাজ নিয়াজ ট্রেডার্স এবং অবকাঠামোগত অন্যান্য কাজ করছে দেশলিংক লিমিটেড। ঠিকাদারদের মধ্যে কেউ তাঁদের কাজ বুঝিয়ে দিতে পারেনি।

এ ছাড়া অন্যান্য কাজের মধ্যে রয়েছে সাবস্টেশন ভবন (১ হাজার ৫০ বর্গফুট), অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণ, সিকিউরিটি রুম, দুটি পিকনিক শেড (টয়লেট, রান্নাঘরসহ প্রতিটি ১ হাজার ৭০৮ বর্গফুটের)। এর বাইরে প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে হ্রদ ও শিশুদের খেলাধুলার জায়গা।

জানা গেছে, প্রকল্পের কাজগুলোকে তিন ভাগে বাস্তবায়ন করছে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে সীমানাপ্রাচীর ও ফটকের কাজ করছে রাজ করপোরেশন; বালু ভরাট, হ্রদ, ভেতরের রাস্তা ও নালার কাজ নিয়াজ ট্রেডার্স এবং অবকাঠামোগত অন্যান্য কাজ করছে দেশলিংক লিমিটেড। ঠিকাদারদের মধ্যে কেউ তাঁদের কাজ বুঝিয়ে দিতে পারেনি।

প্রকল্পের আওতায় মাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। গত মঙ্গলবার সকালে তোলা

গত মঙ্গলবার সকালে প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটকের কাছে মাল্টিপারপাস ভবনে কাজ করছেন দেশলিংক লিমিটেডের শ্রমিকেরা। ওই ভবনের ওপরে ছাদ ঢালাইসহ অবকাঠামোগত অনেক কাজ এখনো শেষ হয়নি। এর বাইরে কটেজগুলোর নির্মাণকাজ শেষ হলেও এখনো রং করা হয়নি। পূর্ব পাশের সীমানাপ্রাচীর বুঝিয়ে দেওয়ার আগে ভেঙে গেছে, সেখানে নতুন করে কাজ করা হচ্ছে।

আমরা বাড়তি শ্রমিক কাজে লাগাচ্ছি। মাল্টিপারপাস ভবনের একটি ছাদ ঢালাইয়ের প্রস্তুতি চলছে। অন্যান্য স্থাপনার রং ও টাইলসের কাজ শিগগিরই শেষ হবে।
—ওমর ফারুক, ঠিকাদারের প্রতিনিধি

স্থানীয় লোকজন জানান, সমুদ্রসৈকতকে ঘিরে হাতে নেওয়া উন্নয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পারকির দৃশ্য বদলে যেত। সৈকতে দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা বেড়াতে আসতেন এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তন আসত এলাকায়; কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘসূত্রতার কারণে প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়নি।

পূর্ব পাশের সীমানা প্রাচীর বুঝিয়ে দেওয়ার আগে ভেঙে গেছে, সেখানে নতুন করে কাজ করা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার তোলা

প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অবকাঠামোগত কাজ বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান দেশলিংক লিমিটেডের প্রতিনিধি ওমর ফারুক বলেন, ‘আমরা বাড়তি শ্রমিক কাজে লাগাচ্ছি। মাল্টিপারপাস ভবনের একটি ছাদ ঢালাইয়ের প্রস্তুতি চলছে। অন্যান্য স্থাপনার রং ও টাইলসের কাজ শিগগিরই শেষ হবে।’

জানতে চাইলে পারকি সৈকত পর্যটন কমপ্লেক্সর প্রকল্প পরিচালক মাজেদুর রহমান বলেন, ‘পুরো প্রকল্পের কাজ ৮০ শতাংশের বেশি শেষ। এখন সব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করায় কাজের অগ্রগতি দৃশ্যমান হচ্ছে। আশা করছি, আগামী ডিসেম্বরের আগে পুরো প্রকল্পটি বুঝে পাব।’

এদিকে গত বুধবার বেলা ১১টার দিকে পারকি সমুদ্রসৈকত পর্যটন কমপ্লেক্সের কাজ পরিদর্শন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনিও ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ সময় উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, পানি সমস্যাসহ নানা কারণে প্রকল্পের কাজে কিছুটা ধীরগতি ছিল বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।