
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক তিন সমন্বয়কের নেতৃত্বে ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ নামে প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। এতে সহসভাপতি (ভিপি) পদে সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে সালাউদ্দিন আম্মার ও সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে আকিল বিন তালেব প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
আজ বুধবার দুপুরে রাকসু ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে ১৮ সদস্যের প্যানেল ঘোষণা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে জিএস পদপ্রার্থী সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘আমরা দল, মত, মতাদর্শের ঊর্ধ্বে গিয়ে আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করব। স্বতন্ত্র জায়গা থেকে যারা যোগ্য, তাদের নিয়ে আমরা এই প্যানেল গঠন করার চেষ্টা করেছি। আগামীর ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক আবহ কেমন হবে, সেটা শিক্ষার্থীদের ভোটের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে।’
প্যানেলে ক্রীড়া সম্পাদক পদে লড়বেন মো. ইয়াসিন আরাফাত বিজয়, সহক্রীড়া সম্পাদক পদে মো. মনজু আরিফ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে মো. মাহবুব আলম মোহন, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক পদে হেমা আক্তার ইভা, সহমহিলা–বিষয়ক সম্পাদক পদে জান্নাতুল ফেরদৌসী তৃষা, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে মো. মিনহাজুর রহমান, মিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ফাহির আমিন, সহমিডিয়া সম্পাদক এম শামীম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে মো. জাকির হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
এ ছাড়া সহবিতর্ক–বিষয়ক সম্পাদক আরিয়ান আহমদ, পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে আহসান হাবিব, সহসমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে মোছা. ঈশিতা পারভীন তিথি লড়বেন। নির্বাহী সদস্যপদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সাজ্জাদ হোসাইন, মো. আরিফুল ইসলাম, হাবিব হিমেল। এ ছাড়া সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য পাঁচটি পদে প্যানেল থেকে পাঁচজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন মেহেদী সজীব, সালাউদ্দিন আম্মার, আকিল বিন তালেব, মো. জাকির হোসেন ও আহসান হাবিব।
সাবেক তিন সমন্বয়কের নেতৃত্বের এই প্যানেলকে ছাত্রশিবিরের ‘বি টিম’ হিসেবে গঠন করা হয়েছে বলে ক্যাম্পাসে গুঞ্জন উঠেছে। এ–সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘তারা (ছাত্রশিবির) তাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে প্যানেল গঠন করেছে, আমরাও আমাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চটা দিয়ে প্যানেল গঠন করেছি। এটা একটা তুচ্ছ অজুহাত। এই প্যানেলে যাঁরা আছেন, তাঁরা সবাই জুলাই যোদ্ধা। এখানে যোগ্য প্রার্থীদের নিয়েই প্যানেল গঠন করা হয়েছে। এ জন্য ১৮ সদস্যের প্যানেল দেওয়া হয়েছে। পরে যোগ্য প্রার্থী পেলে প্যানেলে তাঁদের আমন্ত্রণ জানানো হবে।’
নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আকিল বিন তালেব বলেন, ‘শুরু থেকেই বেশ কিছু বিষয়ে আমাদের কাছে অসংগতি মনে হয়েছে, আমরা সেগুলোর প্রতিবাদ করেছি। সম্প্রতি হলগুলোয় যেভাবে ব্যালট নম্বর দেওয়া হয়েছে, সেটা নিয়ে বিভ্রান্তি ও অসংগতি দেখা দিয়েছে। আমরা দেখেছি, কোনো একটি দলকে ব্যালটের এক নম্বর দেওয়া হয়েছে। ডোপ টেস্টের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন তাদের কথায় স্থির নয়। নির্বাচনের এখনো অনেক সময় আছে, এ সময়ে কমিশন তাদের সংগঠিত করে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে বলে আমরা আশা করি।’
প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মেহেদী সজীব বলেন, ‘আমরা জিতব, নয়তো শিখব। আমরা হেরে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি দায়বদ্ধতা শেষ করতে আসিনি। আমরা দীর্ঘদিন থেকে কাজ করে আসছি। আশা করি, শিক্ষার্থীরা আমাদের বাছাই করবেন। এই আকাঙ্ক্ষার জায়গা থেকেই মূলত আমরা এখানে হাজির হয়েছি। শিক্ষার্থীরা যোগ্য মনে করলে ভোট দেবেন, অন্যদের যোগ্য মনে করলে তাঁদের ভোট দেবেন।’ হল সংসদে প্যানেলের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক সহযোদ্ধা হলগুলোয় স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করছেন। হলগুলোয় আমরা প্যানেল না দিলেও ওই প্রার্থীদের প্রতি আমাদের সমর্থন থাকবে।’
এর আগে রোববার দুপুরে প্যানেল ঘোষণা করে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির। ছাত্রশিবিরের প্যানেলে জিএস পদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ফজলে রাব্বি মো. ফাহিম রেজাকে রেখে চমক দেয়। পরে গত সোমবার গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ ও রাকসু ফর র্যাডিক্যাল চেঞ্জ নামে আরও দুটি প্যানেল ঘোষণা করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ঘোষণা হয় ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের আরেকটি প্যানেল। এ নিয়ে রাকসু নির্বাচনে এখন পর্যন্ত মোট ছয়টি প্যানেলের আত্মপ্রকাশ ঘটল।