
রাজশাহীর পবায় ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে ভোট চাইতে গিয়ে হেনস্তা ও মারধরের অভিযোগ ওঠা জামায়াতের কর্মীর বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরের সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে ‘সচেতন নারী সমাজের’ ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করে রাজশাহী নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম।
১১ নভেম্বর সন্ধ্যায় পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের আশরাফের মোড় এলাকায় বিএনপির দুই নারী কর্মীকে মারধর ও হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ। অভিযোগকারী দুজন হলেন উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের নিলুফার ইয়াসমিন ও তাঁর বোন নূরভানু। অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম নুরুল ইসলাম। তিনিও একই এলাকার বাসিন্দা ও জামায়াতের কর্মী। এ ঘটনার পর ভুক্তভোগী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন ও গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সম্পাদক ও রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে দলীয় প্রার্থী শফিকুল হক (মিলন), বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা হাবিবা, মহিলা দলের রাজশাহী মহানগরের সভাপতি শামসাদ মিতালী, রাজশাহী বিভাগীয় মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক রোকসানা বেগম (টুকটুকি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল আলিম, ইউট্যাবের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি অধ্যাপক অধ্যাপক মামুনুর রশীদ প্রমুখ।
বিএনপি নেতা শফিকুল হক বলেন, নির্বাচনের ট্রেন চালু হয়েছে। কিন্তু এ সময়ে রাজশাহীর এ ঘটনা কিছুটা হলেও সেই ট্রেনকে বাধাগ্রস্ত করেছে। নারীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। রাজশাহীতে যাঁরা নারীদের হেনস্তা করছেন, তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের কাজ না করতে পারেন।
শামসাদ মিতালী বলেন, ‘আমাদের দেশে ৫২ শতাংশ ভোটার নারী। নারীদের অধিকার নিয়ে অনেক কথা বলা হয়, কিন্তু আমাদের নেত্রী নিলুফার ও তাঁর বোনের ওপর যেভাবে নির্মমভাবে অত্যাচার করা হলো, তাতে প্রমাণ হয়, তাদের কথার সঙ্গে কাজের কোনো মিল নেই।’ এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হলে নারীরা দেশজুড়ে কঠোর আন্দোলনে নামবেন।
ইউট্যাব নেতা মামুনুর রশীদ ঘটনাটিকে অকল্পনীয় উল্লেখ করে বলেন, আজ যখন নারীরা শিক্ষা, গবেষণা, অর্থনীতিসহ সব ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন তাঁদের ওপর নির্যাতন করে দেশকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। যাঁরা এই জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছেন, প্রশাসনকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাঁদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য মাহমুদা হাবিবা বলেন, ‘আমরা শুধু একজন কর্মীর ওপর হামলার বিরুদ্ধে দাঁড়াইনি, আমরা দাঁড়িয়েছি সেই সংস্কৃতির বিরুদ্ধে, যা একজন পুরুষকে রাজনৈতিক পরিচয়ে নারীর গায়ে হাত তোলার সাহস জোগায়।’ তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আইনগত ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। যেই পা আমার বোনের দিকে উঠেছে, সেই পা আইনের মাধ্যমে ভেঙে দেওয়া হবে।’
অভিযোগের বিষয়ে জামায়াতের কর্মী নুরুল ইসলাম দাবি করেন, তাঁকে উদ্দেশ্য করে ‘আমার বউ নৌকাত ভোট দিছি’ বলে কটূক্তি করায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ওই নারীকে শুধু ধাক্কা দিয়েছিলেন। এর বেশি কিছু ঘটেনি।
কাটাখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল মতিন বলেন, এ ব্যাপারে থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। জিডিটি আদালতে পাঠানো হয়েছে, বিষয়টি তদন্তাধীন।