মঞ্চে সহশিল্পীদের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করছেন প্রিয়াঙ্কা
মঞ্চে সহশিল্পীদের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করছেন প্রিয়াঙ্কা

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর লেখা

দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে 

নিভু নিভু আলোয় মঞ্চে উঠলেন একদল তরুণ-তরুণী। ধীরে ধীরে সুরের তালে শুরু হলো নাচ। হাতের ভঙ্গি, কোমরের বাঁক, পায়ের তাল, কী নেই এতে। মৃদঙ্গের লয়, মঞ্জিরার টিটি ধ্বনি ও তরুণীর দৃষ্টিভঙ্গি—সব মিলিয়ে স্পর্শ করল দর্শকের হৃদয়। তাই তো শেষ হতেই মিনিটখানেক হলো তাঁদের হাততালি।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউটে দেখা যায় এ দৃশ্য। তরুণ-তরুণীদের নাচের দলের নেতৃত্বে ছিলেন নৃত্যশিল্পী প্রিয়াঙ্কা বড়ুয়া। অবশ্য শুধু থিয়েটার ইনস্টিটিউট নয়, দেশ–বিদেশে নানা জায়গায় মনোমুগ্ধকর এ নৃত্যের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা। শিশুকাল থেকে প্রায় তিন দশক ধরেই তিনি এ চর্চা অব্যাহত রেখেছেন।

প্রিয়াঙ্কা বড়ুয়ার বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়ার করতালা গ্রামে। তাঁর বাবা নিশীত কান্তি বড়ুয়া ও মা বীণা বড়ুয়া। তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। ২০০৮ সাল থেকে তিনি নৃত্য শেখার প্রতিষ্ঠান নৃত্যরূপ একাডেমি পরিচালনা করছেন। তাঁর এ প্রতিষ্ঠান থেকে নাচ শিখছেন শত শত শিক্ষার্থী।

প্রিয়াঙ্কা বড়ুয়া মূলত ওডিশি নৃত্যের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছেন। এ নৃত্য ভারতের শাস্ত্রীয় নৃত্যধারাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এতে শরীরের ত্রিভঙ্গ ভঙ্গি, কোমল হাতের ছন্দ ও চোখের ভাষা—একসঙ্গে একটি গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়। খ্যাতিমান ওডিশি নৃত্যশিল্পী প্রমা অবন্তী ছিলেন প্রিয়াঙ্কার গুরু। এ ছাড়া তিনি কলকাতার নৃত্যশিল্পী দেবমিত্রা সেনগুপ্তা ও বেনজীর সালাম থেকেও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

এসবের বাইরে প্রিয়াঙ্কার ঝুলিতে রয়েছে বিভিন্ন একাডেমিক সনদ। চলতি বছর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। এ ছাড়া শাশ্বত ললিতকলা একাডেমি থেকে পাঁচ বছর, জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে চার বছর মেয়াদি দুটি কোর্সের সনদও রয়েছে তাঁর। সব মিলিয়ে প্রায় ২২ বছর ধরে তিনি ওডিশি নৃত্যের সঙ্গে রয়েছেন।

প্রিয়াঙ্কা বড়ুয়া

প্রতিযোগিতামূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও সফলতা পেয়েছেন প্রিয়াঙ্কা। ২০০৪ ও ২০০৫ সালে শৈশবেই তিনি বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি-যুব আয়োজিত সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। 

এরপর ২০০৬ সালে নূপুর প্রতিভা সন্ধান প্রতিযোগিতায় দলীয় নৃত্যে পান পুরস্কার, এরপর পান সত্য সাহা স্বর্ণপদক। ২০১৩ সালে দেশের নৃত্যবিষয়ক রিয়েলিটি শো চ্যানেল আই সেরা নাচ প্রতিযোগিতাতেও তিনি অংশ নিয়ে  সেরাদেদ তালিকায় ছিলেন।

জানতে চাইলে প্রিয়াঙ্কা বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘নৃত্য আমার কাছে শুধু শিল্প নয়, এটি একধরনের সাধনা। জীবনের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত আমি এ সাধনার সঙ্গে থাকতে চাই। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে নৃত্যশিল্পকে এগিয়ে নিতে চাই।’

আন্তর্জাতিক মঞ্চেও খ্যাতি রয়েছে প্রিয়াঙ্কার। ২০২১ সালে বিশ্ব ওডিশি উৎসব, ২০২৩ সালে ভারতের ওডিশার ভুবনেশ্বরে আয়োজিত বিশ্ব ওডিশি উৎসব ও  গত বছর দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে কোরিয়ান মাইম ফেস্টিভ্যালে তিনি অংশ নিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন। এর বাইরে তাঁর পরিচালিত নৃত্যরূপ একাডেমিও চট্টগ্রামে সাড়া ফেলেছে।

তাঁর একাডেমির শিক্ষার্থী আদ্রিতা বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁর (প্রিয়াঙ্কার) নাচ দেখলে মনে হয় আমরা গল্পের মধ্যে প্রবেশ করেছি। তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ, ভঙ্গি এবং চোখের ভাষা—সবকিছুই আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার। আমরা প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শিখি।’