
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ ও অনূর্ধ্ব-১৭ নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড় প্রতিমা মুন্ডাকে আর্থিক অনটনের কারণে আর খেলা ও লেখাপড়া ছাড়তে হবে না। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) তাঁর বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে কিশোর আলো।
প্রতিমা মুন্ডা ২০২১ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হন। ২০২২ সালে অনূর্ধ্ব-১৫ ও ২০২৩ সালে অনূর্ধ্ব-১৭ দলে বাংলাদেশের হয়ে খেলেন তিনি। অংশ নেন ভারতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সুব্রত কাপে। কিন্তু বিকেএসপিতে মাত্র ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকার জন্য তাঁর পড়াশোনা ও খেলাধুলা থেমে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল।
বিকেএসপির একাদশ শ্রেণির ছাত্রী প্রতিমার অভিভাবককে গত ২৫ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে জানায়, জুন পর্যন্ত তাঁর বকেয়া বেতন ৪৬ হাজার ৮৪০ টাকা। চিঠিতে সতর্ক করে বলা হয়, ৬ মাসের বেশি বেতন বকেয়া থাকলে প্রশিক্ষণার্থীকে চূড়ান্ত সতর্কীকরণ দেওয়া হয়, আর ১২ মাসের বেশি বকেয়া থাকলে বহিষ্কারের বিধান আছে।
এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রথম আলোয় প্রকাশিত হওয়ার পর কিশোর আলোর পক্ষ থেকে প্রতিমার বকেয়া বেতন পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সাতক্ষীরা জেলা শহর থেকে প্রায় ৪০ মাইল দূরে তালা উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে প্রতিমাদের বাড়ি। গতকাল পড়ন্ত বিকেলে কিশোর আলোর পক্ষ থেকে প্রথম আলোর সাতক্ষীরার নিজস্ব প্রতিবেদক কল্যাণ ব্যানার্জি তাঁদের বাড়িতে গিয়ে প্রতিমা ও তাঁর মা সুনিতা মুন্ডার হাতে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের সৌজন্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়।
প্রতিমার পরিবার অত্যন্ত অসচ্ছল। অসুস্থ বাবা শ্রীমন্ত মুন্ডা দিনমজুরের কাজ নিয়মিত করতে পারেন না। মা সুনিতা মুন্ডা সপ্তাহে গড়ে তিন থেকে চার দিন কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। প্রতিদিনের মজুরি ২০০ টাকা। মাসে দুজনের পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকার বেশি আয় হয় না। তাঁরা একটি এনজিওর দেওয়া তিন শতক জমিতে চাটাইয়ের বেড়া আর অ্যাসবেস্টারের ছাউনি দেওয়া ঘরে বসবাস করেন।
প্রতিমা বলেন, এ বছর তিনি জাতীয় দলে ডাক পেয়েছিলেন। কিন্তু অসুস্থতার কারণে যোগ দিতে পারেননি। কলেজ কর্তৃপক্ষ বারবার টাকার জন্য বলেছে, চিঠিও দিয়েছে। টাকা না দিলে আর হয়তো বিকেএসপিতে থাকতে পারবেন না—এমন আশঙ্কায় তাঁদের দুশ্চিন্তার শেষ ছিল না। কিশোর আলোর পক্ষ থেকে বকেয়া বেতনের ৫০ হাজার টাকা দিয়ে সহযোগিতা করায় সেই শঙ্কা কেটে গেল। সব বাধা অতিক্রম করে এখন এগিয়ে যাওয়ার নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন প্রতিমা।
বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক আফঈদা খন্দকারের বাবা ও প্রতিমার প্রশিক্ষক খন্দকার আরিফ হাসান বলেন, ‘কিশোর আলোর এই উদ্যোগ প্রতিমার স্বপ্ন জাগিয়ে তুলল, বাঁচিয়ে রাখল।’