Thank you for trying Sticky AMP!!

সারা দেশে চা-বাগানে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চলছে

মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে মৌলভীবাজার-বড়লেখা আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে চা-শ্রমিকদের বিক্ষোভ। লুয়াইউনি-হলিছড়া চা-বাগানের সামনে, কুলাউড়া, মৌলভীবাজার

মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চট্টগ্রাম, সিলেটসহ সারা দেশের ২৩১টি চা-বাগানে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করছেন চা-শ্রমিকেরা। আজ শনিবার সকালে ধর্মঘটের প্রথম দিনে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের খাইছড়া চা-বাগান ও ভুরভুরিয়া চা-বাগানের শ্রমিকেরা ভাড়াউড়া চা-বাগানের এসে বিক্ষোভ করছেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার থেকে ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করে আসছিলেন শ্রমিকেরা। তবে দাবি মেনে না নেওয়ায় গতকাল শুক্রবার অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দেয় চা-শ্রমিক ইউনিয়ন।  

আজ সকালে শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চা-বাগানে আন্দোলনরত শ্রমিকদের দাবি আদায়ের বিষয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা গেছে। সমাবেশে আসা নারী চা-শ্রমিক উষা রানী বলেন, ‘আমাদের দুঃখ কেউ বোঝে না। আমরা চার দিন কর্মবিরতি করেছি। কিন্তু কেউ আমাদের এসে আশ্বাস দিল না। আমরা এত কষ্ট করে কাজ করি, কিন্তু আমাদের ন্যায্য মজুরি দেওয়া হয় না। চাল, ডাল, তেল—সবকিছুর দাম বেড়েছে। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ আছে। অসুখ হলে চিকিৎসা করাতে হয়। এর মধ্যে প্রতিদিনই জিনিসের দাম বাড়ছে। কিন্তু আমাদের মজুরি বাড়ছে।’

Also Read: দাবি না মানলে শনিবার চা-শ্রমিকদের মহাসড়কে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা

আরেক নারী শ্রমিক শিলা ভূঁইয়া বলেন, ‘আমাদের দাবি জানানোর আগেই বাগানমালিকদের উচিত, আমাদের খোঁজখবর নেওয়া। আমরা কাজ ফেলে কেন আন্দোলন করব! দুই বছর আগে যে জিনিস ১০০ টাকায় পাওয়া যেত, এখন সেটা ২০০ টাকা। আমাদের তো আলাদা কোনো রুজির ব্যবস্থা নেই। এটা তো বাগানমালিকেরা জানে। আমরা ছেলেমেয়েদের আশা পূরণ করতে পারি না। আমরা আন্দোলন করছি। দাবি আদায় না হলে রাস্তায় রক্ত দেব। যদি শ্রমিক ইউনিয়নও আন্দোলন বন্ধ করার কথা বলে, আমরা মানব না।’

ভাড়াউড়া বাগান পঞ্চায়েতের সভাপতি নুর মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, আন্দোলনের আজ পঞ্চম দিন চলছে। মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চার দিন ধরে দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে। কিন্তু মালিকপক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা দুই বছর আগ থেকে দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু ১৯ মাস পার হয়ে গেলেও মালিকপক্ষ মজুরি বৃদ্ধির ব্যাপারে গড়িমসি করছে। তারা মাত্র ১৪ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে মাত্র ১৪ টাকা দিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না।’

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বালিশিরা ভ্যালির সভাপতি বিজয় হাজরা প্রথম আলোকে বলেন, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট চলছে। দেশের ২৩১টি চা-বাগানে এ ধর্মঘট পালিত হচ্ছে। ৩০০ টাকা মজুরি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আন্দোলন কঠোর থেকে কঠোরতর হবে। দেশের বিভিন্ন বাগানে চা-শ্রমিকেরা একত্র হয়েছেন। বাগানে বাগানে সমাবেশ হবে। দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হবে। এ ছাড়া শ্রীমঙ্গল শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের হবে।

Also Read: কঠোর আন্দোলনের আল্টিমেটাম চা-শ্রমিকদের

শ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়ে বাংলাদেশীয় চা-সংসদের সিলেট বিভাগের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের আলোচনাকালে এভাবে কাজ বন্ধ করে আন্দোলন করা বেআইনি। আমরা আশা করছি, তারা আন্দোলন বন্ধ করে কাজে যোগ দেবে। এখন চা-বাগানে ভরা মৌসুম। কাজ বন্ধ রাখলে সবার ক্ষতি। তারাও এই মৌসুমে কাজ করে বাড়তি টাকা পায়।’