সাতকানিয়ার খাগরিয়ার সেই কেন্দ্র দুটি নিয়ে শঙ্কিত প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা
সাতকানিয়ার খাগরিয়া গণিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। সকাল ৯টা। ভোটারদের লাইন খুব একটা নেই। প্রথম ঘণ্টায় ৫০টির বেশি ভোট পড়েনি। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবুল বাশার চৌধুরী বললেন, ‘আগের নির্বাচনের সহিংসতার ঘটনার কারণে কেন্দ্রটির বদনাম আছে। তাই আপনারা একটু খোঁজখবর রাখবেন আমাদের। এখন পর্যন্ত কোনো ঝামেলা হয়নি।’
আবুল বাশার সাতকানিয়ার সন্তান। সাতকানিয়া জাফর আহমেদ কলেজের প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাই খাগরিয়া গণিপাড়া কেন্দ্রে ২০২২ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে গোলাগুলির ঘটনা তাঁর অজানা নয়। সেবার একসঙ্গে অন্তত ১০ জনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গিয়েছিল। পরে গণিপাড়া কেন্দ্র এবং ৭ নম্বর বোর্ড অফিস কেন্দ্র দুটি স্থগিত করা হয়েছিল।
বোর্ড অফিস কেন্দ্রটি সরিয়ে গণিপাড়া স্কুলের পাশে খাগরিয়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে নিয়ে আসা হয় এবার। মূলত সেবার আওয়ামী লীগের ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী আকতার হোসেনের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী জসিম উদ্দিনের সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছিল। এবারও এই দুই স্থানীয় নেতা চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক) আসনের দুই প্রার্থীর পক্ষ নিয়েছেন। জসিম উদ্দিন নৌকার প্রার্থী নজরুল ইসলাম চৌধুরী ও আকতার হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের আবদুল জব্বারের পক্ষ নিয়েছেন। এ কারণে এবারও এ দুই কেন্দ্র ঝুঁকিতে রয়েছে।
সকালে গণিপাড়া প্রাথমিক স্কুল কেন্দ্রে ঢুকতেই পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী উপপরিদর্শক নজরুল ইসলাম পরিচয় জানতে চাইলেন। তিনি বললেন, ‘কেন্দ্রটির কিছু দূর থেকে কাল রাতে গুলির শব্দ শুনেছি। কেন্দ্রটি গুরুত্বপূর্ণ তালিকায় রয়েছে। তাই সতর্ক আছি। ’
সরেজমিন দেখা গেছে, কেন্দ্রটিতে নৌকা ও ট্রাক দুই পক্ষের এজেন্ট রয়েছেন। তবে নারী কেন্দ্রটিতে ভোটার নেই। দু–একজন নারী ভোটার আসছেন। পেয়ারজান নামে সত্তরোর্ধ্ব একজন বলেন, ‘গতবার ঝামেলা হয়েছিল। এবার ভোট দিতে পেরেছি।’
কেন্দ্রটিতে মোট ভোটার ২ হাজার ৬৯৯ জন। কক্ষ রয়েছে ৫টি। কেন্দ্রের পাশে ট্রাক প্রতীকের কিছু যুবকের অবস্থান দেখা গেছে। তবে নৌকার তেমন তৎপরতা চোখে পড়েনি। ভোটারদের ধারণা, নৌকার লোকজন এলে সমস্যা হতে পারে।
পাশের খাগরিয়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় (পুরুষ) কেন্দ্রটিতে ভোটার ৩ হাজার ২৯ জন, কক্ষ ৭টি। এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবু সুফিয়ানও আশঙ্কার কথা শোনালেন। তিনি বললেন, ‘কেন্দ্র দুটি একটু ঝুঁকিপূর্ণ। গতকাল শনিবার রাতে দূর থেকে গুলির শব্দ শুনেছি। যদি কাছে হতো তাহলে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ফোন করতাম। এখনো তো পুরো দিন পড়ে রয়েছে। একটু শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করতে পারলে হয়।’
এর আগে সকাল সোয়া আটটায় একই আসনের হাশিমপুর এম কে ইউ উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে দেখা গেছে ভোটার শূন্য। এখানে ৫টি কক্ষে মোট ভোটার ২ হাজার ৮০ জন। এই কেন্দ্রের আশপাশেও গতকাল রাতে গুলির শব্দ শোনা গেছে বলে ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তারা জানান।
রাতে চন্দনাইশ পৌরসভা, সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন, দোহাজারীসহ বিভিন্ন স্থানে গুলির শব্দ শোনা গেছে। রাত সাড়ে ১১টা থেকে দিবাগত রাত ৩টা পর্যন্ত থেমে থেমে শব্দ শোনা যায়। এ সময় পৌরসভার চৌধুরীপাড়ায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুর রহমানের ঘর লক্ষ্য করে গুলি করা হয় বলে জানান চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসিম মুসা। তিনি বলেন, ‘গুলিতে আওয়ামী লীগ নেতার ঘরের জানালার কাচ ভেঙে গেছে। বিভিন্ন স্থান থেকে রাতে শব্দ শুনেছি।’
চন্দনাইশ উপজেলা ও সাতকানিয়ার ৬ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-১৪ আসনের ১০০টি কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ৮৮ হাজার ২৯৩ জন।
আরও পড়ুন
-
পাঠ্যবই থেকে আলোচিত ‘শরীফার গল্প’ বাদ দিতে সুপারিশ বিশেষজ্ঞ কমিটির
-
ফোর্বসের এশিয়ার তরুণ উদ্যোক্তাদের তালিকায় ৯ বাংলাদেশি
-
ছাগলনাইয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান ঘোষণা ছিল অবৈধ: হাইকোর্ট
-
কেজরিওয়ালকে নিয়ে বিজেপি দিশাহারা, ইডির আরজিও খারিজ
-
যুদ্ধ শেষে গাজায় শান্তিরক্ষী মোতায়েনের পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের