
দাবি আদায়ে রেলওয়ের রানিং স্টাফরা সারা দেশে কর্মবিরতির ঘোষণা দেওয়ার পর আজ মঙ্গলবার সকালে পঞ্চগড় থেকে কোনো ট্রেন ছেড়ে যায়নি। গন্তব্যে যেতে রেলস্টেশনে এলেও ট্রেন চলাচল না করায় ফিরে যেতে হয়েছে অনেক যাত্রীকে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তাঁরা।
তবে গতকাল রাত ১২টার আগে ঢাকা ও রাজশাহী থেকে পঞ্চগড়ের উদ্দেশে ছেড়ে আসা ট্রেনগুলোর মধ্যে একটি ভোরে পঞ্চগড়ে এসে পৌঁছেছে। বাকিগুলো নির্ধারিত সময়ে পৌঁছাবে বলে স্টেশনমাস্টার জানিয়েছেন।
সোমবার দিবাগত মধ্যরাতের পর ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেন রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন তাঁরা। এই রানিং স্টাফরা হলেন গার্ড, ট্রেনচালক (লোকোমাস্টার), সহকারী চালক ও টিকিট পরিদর্শক (টিটিই)। এ ধরনের কর্মী আছেন প্রায় দুই হাজার। তাঁরা সাধারণত দীর্ঘ সময় ট্রেনে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
আজ মঙ্গলবার সকাল সোয়া সাতটায় পঞ্চগড়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রার উদ্দেশ্যে প্ল্যাটফর্মে ভেড়ানো হয়নি কোনো ট্রেন। স্টেশনে টানিয়ে দেওয়া হয়েছে কর্মবিরতির ব্যানার। স্টেশনের লাইনের ওপর কয়েকটি ট্রেন দাঁড়িয়ে ছিল। স্টেশনমাস্টারের দপ্তরসহ অন্য দপ্তরগুলো খোলা থাকলেও স্টেশনজুড়ে সুনসান নীরবতা। যাত্রীদের কেউ এসে ট্রেন চলাচল করবে না শুনে ফিরে যাচ্ছেন। কেউবা এসব টিকিটের টাকা ফেরত পাবেন কি না, জানতে চাচ্ছেন স্টেশনমাস্টারের কাছে।
রেলস্টেশন সূত্রে জানা গেছে, সকাল ছয়টায় পঞ্চগড় থেকে সান্তাহারের উদ্দেশে দোলনচাঁপা ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তা ছেড়ে যায়নি। এরপর সকাল ৭টা ২০ মিনিটে পঞ্চগড় থেকে ঢাকার উদ্দেশে দ্রুতযান এক্সপ্রেস ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তা ছেড়ে যায়নি। তবে রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে পঞ্চগড়ে পৌঁছেছে।
সকালে রেলস্টেশনে এসে ফিরে যাচ্ছিলেন শাহিনা বেগম (২৬)। তিনি বলেন, ‘দ্রুতযান এক্সপ্রেসে ঢাকায় যাওয়ার জন্য সোমবার টিকিট কেটেছি। এখন এখানে এসে শুনি, ট্রেন যাবে না। এত শীত-কুয়াশার মধ্যে এসে এখন ফিরে যেতে হচ্ছে! এই টিকিটের টাকা কবে ফেরত পাব, কে জানে।’
তেঁতুলিয়া থেকে আসা নবির উদ্দিন নামের এক যাত্রী বলেন, ‘সকালে শীতের মধ্যে এত কষ্ট করে এসে দেখি, ট্রেন যাবে না। এটা আমাদের আগে জানিয়ে দিতে পারত।’
সারা দেশে কর্মবিরতির কথা জানিয়ে লোকোমাস্টার আলমগীর হোসেন বলেন, ‘কেন্দ্রীয়ভাবে এই কর্মসূচির বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত হলে আমরা সেই অনুযায়ী পালন করব। যদি ট্রেন ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে আমরা চালাব।’
কর্মবিরতির বিষয়ে রানিং স্টাফরা চিঠি দিয়েছেন বলে জানান পঞ্চগড়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলওয়ে স্টেশনে কর্তব্যরত স্টেশনমাস্টার জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাত ১২টার আগে ঢাকা ও রাজশাহী থেকে যেসব ট্রেন পঞ্চগড়ের উদ্দেশে ছেড়েছে, তার মধ্যে বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস ভোরে পঞ্চগড়ে পৌঁছেছে। এ ছাড়া দ্রুতযান ও পঞ্চগড় এক্সপ্রেসেরও পঞ্চগড়ে পৌঁছার কথা আছে। তবে রানিং স্টাফদের কর্মবিরতির কারণে সকাল থেকে কোনো ট্রেন পঞ্চগড় ছেড়ে যায়নি। যাত্রীদের যাঁরা অনলাইনে টিকিট কেটেছেন, তাঁরা অনলাইনে এবং যাঁরা কাউন্টার থেকে টিকিট কেটেছেন, তাঁরা কাউন্টার থেকে নিয়ম অনুযায়ী টাকা ফেরত পাবেন বলে তিনি জানান।